রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসের মধ্যে আউলিয়ার ঘাটে সেতু নির্মাণকাজ শুরু হবে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় সম্প্রতি নৌকাডুবিতে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের মধ্যে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম আউলিয়ার ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি আউলিয়ার ঘাটে একটা ব্রিজ (সেতু) নির্মাণের। আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে এই ব্রিজটি করার জন্য নির্বাচিত হওয়ার দিন থেকেই এর পেছনে আমি লেগে আছি। ইতিমধ্যে ব্রিজ হওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এর আগে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এ এলাকা পরিদর্শন করে এখানে সেতু নির্মাণের কথাও দিয়েছেন। সে অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন হয়েছে। এটি এখন ডিজাইন করার পর্যায়ে আছে। ডিজাইন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে টেন্ডার হবে। আমরা আশা করছি, আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে এর কাজ শুরু হবে।’
উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘এ ব্রিজ করতে গেলেও তো এক-দুই বছর সময় লাগবে। এর মধ্যে তো আমাদের নদী পারাপার হতে হবে। সে জন্য এরপর থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’
একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ‘এত বড় নৌ দুর্ঘটনা বাংলাদেশে আর হয় নাই। নৌকাডুবিতে এত বেশি সংখ্যক মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। এই নৌকাডুবিতে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের জানা নাই। কারণ, এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার না।’
এনামুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা যারা সরকারে আছি, সরকার-সরকারের প্রতিনিধি এবং আপনাদের যাঁরা এই অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ আছেন, সবাই মিলে কিন্তু আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য, শক্তি জোগানোর জন্য আমরা আপনাদের পাশে উপস্থিত হয়েছি। আশা করি, আমাদের ভালোবাসা, আমাদের সহমর্মিতা, সহানুভূতি, সমবেদনা আপনাদের সেই দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে দিতে সহায়তা করবে। ’
এ সময় প্রতিমন্ত্রী নৌকাডুবির এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজনসহ যাঁরা উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এ ছাড়া নৌকাডুবিতে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে যা যা প্রয়োজন, তা–ই করা হবে বলে জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদ, পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে নৌকাডুবিতে নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ৫০ হাজার করে টাকা ও দুটি করে শুকনো খাবারের প্যাকেট (চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ ও মসলা) দেওয়া হয়। এ ছাড়া একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রতিটি পরিবারকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। মন্ত্রীরা আউলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবির স্থান পরিদর্শন করেন।
গত রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বাজারের পাশে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট থেকে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া শতাধিক যাত্রী নিয়ে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। ঘাট থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন তিনজন।