শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান ৪৩ জন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ‘বিভ্রান্ত’
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শরীয়তপুর জেলার তিনটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছেন ৪৩ জন। তাঁদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছেন। কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি, এমন অনেকেও আছেন এ তালিকায়। এত বেশি মানুষ মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ায় বিভ্রান্ত ও অবাক হয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
শরীয়তপুর-১ আসনে আগ্রহী ২০ জন
শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা উপজেলা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর-১ আসন। এতে ২৩টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা আছে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি ছাড়াও মনোনয়ন চেয়ে মাঠে তৎপর আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার, শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল আলীম ব্যাপারী। তাঁরাসহ এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানসহ ২০ জন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শরীয়তপুর-১ আসনে মনোনয়ন নিয়ে পাঁচ নেতার মধ্যে বিরোধ আছে। এ সুযোগে এখানে অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এমন কয়েকজন মনোনয়ন চান, যাঁদের নেতা-কর্মী ও ভোটাররাও ঠিকমতো চেনেন না।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একজন জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনে অনেকে প্রার্থী হতে চান, যাঁদের অনেকে কখনো আওয়ামী লীগ করেননি। এলাকায় মানুষের বিপদে-আপদে আসেননি। আমার বিশ্বাস, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের প্রতি ত্যাগ ও শ্রম বিবেচনা করে মনোনয়ন দেবেন।’
আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বৃহৎ রাজনৈতিক দল, এখানে নেতা হওয়ার চেষ্টা করেন অনেকে। আমরা তা নিয়ে বিচলিত নই। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিতই আমাদের লক্ষ্য।’
শরীয়তপুর-২ থেকে মনোনয়ন চান ১৫ জন
নড়িয়া উপজেলা ও ভেদরগঞ্জের সখীপুর থানা নিয়ে শরীয়তপুর-২ আসন গঠিত। এ আসনে একটি পৌরসভা ও ২৩টি ইউনিয়ন আছে। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খালেদ শওকত আলী ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য পারভীন হক সিকদার ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাভানা আক্তারসহ ১৫ জন।
নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান খোকন প্রথম আলোকে বলেন, এ আসন থেকে ৯ জন মানুষ মনোনয়ন চান। যাঁদের অনেকে কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। অনেকে এলাকায়ও আসেন না। তাঁদের মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া দেখে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা অবাক।
এনামুল হক বলেন, ‘মনোনয়ন দেবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি যা ভালো বুঝবেন, সেটাই করবেন। তৃণমূলে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে। অনেকে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। কী তাঁদের উদ্দেশ্যে, কেন তাঁরা হঠাৎ মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, তা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও জানেন না।’
শরীয়তপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন চান ১৪ জন
ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর-৩ আসন। এ আসনে ১৯টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভা আছে। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
নাহিম রাজ্জাক ছাড়াও এ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়ে মাঠে তৎপর ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও ন্যাশনাল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান পারভীন হক শিকদার। তাঁরাসহ এ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেদুর রহমান, ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর মাঝি, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিনসহ ১৪ জন।
জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রাজনীতি করেন না, ব্যবসায়ী, এমন অনেকে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন। তাঁরা দলকে বিশৃঙ্খল করতে চান। তাঁদের কারণে তৃণমূলের অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী এত বেশিসংখ্যক লোক আগে কখনো তাঁরা দেখেননি।
সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, চাকরি করেন, পরিবারের লোকজন অন্য দল করত—এমন অনেকে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এতে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এ দলের সঙ্গে এমন করা মোটেও উচিত হয়নি। দলীয় সভানেত্রী যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্বের হাতে নৌকার বইঠা দেবেন, এটা আমাদের বিশ্বাস।’
আওয়ামী লীগ বড় রাজনৈতিক দল হওয়ায় এতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা আছে বলে মন্তব্য করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেদুর রহমান। সার্বিক বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়নের জন্য এত বেশি প্রতিযোগিতা হবে, তা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। যাঁরা কখনো দলের কোনো কর্মসূচিতেও অংশ নেননি, তাঁরাও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।’