খাগড়াছড়িতে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের মামলা
খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশের কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে ১৫৭ জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন হোসেন। এই মামলায় এর মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, মামলার বাদী এসআই মামুন হোসেন ঘটনার দিন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় বিএনপি একটি মামলা করার কথা বললেও পুলিশ এ–সংক্রান্ত কোনো অভিযোগই পায়নি বলে দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের শাপলা চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এ ঘটনার সূত্রপাত। তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সংঘর্ষ চলে। এ সময় গাড়ি চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ থাকে। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। পরে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন শোভাযাত্রা নিয়ে শহরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এতে দুই পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে সংঘর্ষ প্রায় পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে। থেমে থেমে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলতে থাকে। বিএনপি-আওয়ামী লীগের কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় নানা অস্ত্র নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন।
সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে বিএনপির কর্মীরা খাগড়াছড়ি পৌরসভা কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালান। তাঁরা পৌরসভার দরজা-জানালার কাচ ভাঙচুর করে ও আসবাব তছনছ করেন। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া চারটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
দুই দলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিএনপি শহরের কলাবাগান এলাকায় একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় সাবেক সংসদ ও জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাত থেকে জেলা সদর, মাটিরাঙ্গা, রামগড়সহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পানছড়ি উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে জেলায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, এসব ঘটনায় ১৭৬ জন নামধারী এবং ২৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে।
তবে সদর থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো দল মামলা করতে আসেনি। এমনকি কোনো অভিযোগও পাননি তাঁরা।
সকালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। এরপর দলীয় কার্যালয়ে তিনি অভিযোগ করেন, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া শান্ত খাগড়াছড়িকে অশান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে জেলা শহরে নিরস্ত্র আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এতে ৩০ জন নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।
মামলা করবেন পৌর মেয়র
পৌরসভার মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা রাজনৈতিক অধিকার। এই অধিকারের অজুহাতে পৌরসভার কার্যালয়ে হামলা এবং ভাঙচুর চালিয়ে জনস্বার্থ বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি অপরাধীদের বিরুদ্ধে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
তবে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, পুলিশের দুর্বল অবস্থানের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা খাগড়াছড়ি পৌরসভায় হামলা চালান। পৌরসভার সামনে থাকা মোটরসাইকেলগুলোতে অগ্নিসংযোগ করেন। এরপর ভাঙচুর করতে করতে পৌরসভার ভেতর ঢুকে পড়েন। পৌরসভার ভেতর ঢুকে দরজা-জানালা ভাঙচুরের পাশাপাশি আসবাব, কম্পিউটার ছাড়াও অফিসের দাপ্তরিক নথিপত্র তছনছ করেন।
জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি সাময়িকভাবে বিজিবির সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত কমিটির একটি বিশেষ সভা ডাকা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যান চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করার পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তাবিধানে ট্যুরিস্ট পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।