ঝাড়ফুঁকে জীবিত করার কথা বলে টাকা নিয়ে পালালেন কবিরাজ

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সাপের কামড়ে মৃত এক ব্যক্তিকে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে জীবিত করার আয়োজন করেছেন এক কবিরাজ। গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার বাসুরা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সাপের কামড়ে মৃত এক যুবককে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে জীবিত করার কথা বলে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন এক কবিরাজ। গতকাল শনিবার বিকেলে মৃত যুবকের পরিবারের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে কড়ি (ছোট শামুকের খোল, যা ওঝা–কবিরাজ ঝাড়ফুঁকে ব্যবহার করেন) আনার কথা বলে পালিয়ে যান ওই ব্যক্তি।

এদিকে কবিরাজের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর গতকাল মধ্যরাতে মৃত যুবককে দাফন করা হয়েছে।

মৃত সাইফুল ইসলাম (৪০) গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন। গত শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মাছ ধরতে বাড়ির পাশের একটি বিলে যান সাইফুল। পথে তাঁর বাঁ পায়ে সাপে কামড় দেয়। তাঁর সঙ্গে থাকা অন্য ব্যক্তি টেঁটা দিয়ে সাপটি মেরে ফেলেন। পরে মৃত সাপটি নিয়ে সাইফুল বাড়িতে ফিরে স্বজন ও এলাকাবাসীকে সাপে কামড় দেওয়ার ঘটনাটি জানান। প্রথম সাইফুলকে স্থানীয় এক কবিরাজের কাছে নেওয়া হয়। ঝাড়ফুঁক শেষে কবিরাজের বাড়ি থেকে রাতেই তাঁকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন

সাইফুলের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে মরদেহ নিয়ে আসেন। গতকাল বেলা দুইটাই জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয় এবং দাফনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে কবিরাজ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির শরীর শক্ত হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর (সাইফুল) শরীর শক্ত হয়নি। ঘুমন্ত মানুষের মতো নড়াচড়া করছে। কড়ি নিয়ে এসে ঝাড়ফুঁক করলে তাঁকে সুস্থ করা সম্ভব।’ কবিরাজের এমন কথার পর লাশ দাফন বন্ধ করা হয়। পরে কবিরাজের কথামতো খোলা মাঠের মধ্যে কলাগাছ, দুধ, মহিষের শিংসহ বিভিন্ন জিনিস আনা হয়। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোক ওই বাড়িতে ভিড় করেন। কবিরাজ জানান, চিকিৎসার জন্য কড়ি প্রয়োজন। এটি সাভারে পাওয়া যেতে পারে। এ জন্য কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। তখন তাঁকে ১৫ হাজার টাকা দেন তাঁরা। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ১২টা বেজে গেলেও সেই কবিরাজ আর ফিরে আসেননি। ওই কবিরাজের পরিচয় তাঁরা জানতে পারেননি।

আরও পড়ুন
কলাগাছ, দুধ, নতুন সিলভারের কলসিসহ অনেক কিছু ব্যবস্থা করেছি। পরে ওঝা জানায়, চিকিৎসার জন্য কড়ি লাগবে। কড়ি আনতে গিয়ে সে আর ফিরে আসেনি।
আলী হোসেন, মৃত যুবকের ভাই

সাইফুলের ভাই আলী হোসেন বলেন, ‘কলাগাছ, দুধ, নতুন সিলভারের কলসিসহ অনেক কিছু ব্যবস্থা করেছি। পরে ওঝা জানায়, চিকিৎসার জন্য কড়ি লাগবে। কড়ি আনতে গিয়ে সে আর ফিরে আসেনি। গ্রামবাসী ও সবার পরামর্শে রাতে জানাজা শেষে ভাইয়ের দাফন করেছি।’

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা লাশ ধরতে দেননি। ওঝা নাকি তাঁদের বলে গেছেন, চিকিৎসা শেষ করার আগপর্যন্ত এই লাশ ধরা যাবে না। ওই ওঝা কড়ি আনার কথা বলে আর ফিরে আসেননি। পরে স্বজনেরা লাশ দাফন করেছেন।

আরও পড়ুন