ঘূর্ণিঝড় রিমালের দুই দিন পর বৃষ্টির পানি জমে থাকা বিলের ঘাস ও পানি খেয়ে গরুগুলো গোয়ালে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে মারা গেল। এর কারণ কী বলে মনে হয় আপনার?
সবুজ কান্তি নাথ: যেহেতু ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অনেক দিন পর দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি হয়েছে। অনেক দিন পর বৃষ্টি হলে কচি ঘাসে নাইট্রোজেনের মাত্রা বেশি থাকে। এসব ঘাসের নাইট্রেট বিষক্রিয়ায় গরুগুলো মারা যেতে পারে। উপসর্গ শুনে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কারণে আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছে। নাইট্রোজেন বিষক্রিয়া, অ্যানথ্রাক্স, সায়ানাইড বিষক্রিয়া এসব কারণে গবাদিপশু তাৎক্ষণিক মারা যেতে পারে। যেসব দেশে গবাদিপশু আপেল খায়, সচরাচর সেখানে সায়ানাইড বিষক্রিয়া ঘটতে পারে। আমাদের দেশে নাইট্রেট বিষক্রিয়া ও অ্যানথ্রাক্সে সাধারণত তাৎক্ষণিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপরও ঘাস এবং প্রাণীর দেহাংশের নমুনা পরীক্ষা না করে একবারে সুনিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না যে গরুগুলো কী কারণে মারা গেল।
নাইট্রেট বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত কী কী উপসর্গ থাকে?
সবুজ কান্তি নাথ: মুখ দিয়ে লালা ঝরে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে, দুর্বলতা ও দ্রুত হৃৎস্পন্দন হতে পারে। এ ছাড়া শরীরের তাপমাত্রা কমা, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির অতিরিক্ত লাল বর্ণ ধারণ (সায়োনেটিক মিউকাস মেমব্রেন), পেট ব্যথা, শুয়ে পড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব—এসবও হতে পারে। তবে অতিরিক্ত বিষক্রিয়ায় কোনো লক্ষণ ছাড়াই গবাদিপশু মারা যেতে পারে।
কোনো গবাদিপশুর যদি এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, তখন তাৎক্ষণিকভাবে কী করা যেতে পারে? মানে কৃষকের হাতের নাগালে এর কোনো চিকিৎসা আছে কী না?
সবুজ কান্তি নাথ: আসলে নাইট্রেট বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই শিরায় স্যালাইন দেওয়ার কথা। বড় গরুর ক্ষেত্রে তিন-চার লিটার এবং ছোটগুলোর ক্ষেত্রে কমপক্ষে এক লিটার স্যালাইন দেওয়া হয়। তবে গ্রামের খামারি-কৃষকদের কাছে সব সময় এ রকম ব্যবস্থা থাকে না। তাঁরা যে কাজটা করতে পারেন, সেটি হলো সঙ্গে সঙ্গে কাঠ–কয়লার সঙ্গে চক পাউডার মিশিয়ে তিন-চার লিটার পানি গবাদিপশুকে খাইয়ে দেওয়া। এতে খুব কাজ হয়। গ্রামে এখনো জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করায় কয়লা সহজে পাওয়া যায়। চকও সব জায়গায় পাওয়া যায়। এই দুটি জিনিস গুঁড়া করে একটি বোতলে নিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। অর্ধেক কয়লা আর অর্ধেক চক দিয়ে এটা করলে হবে। আর বেশি বেশি পানি খাওয়াতে পারলে ভালো হয়।
এ প্রক্রিয়ার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না?
সবুজ কান্তি নাথ: এটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটা চারকোল (অ্যাক্টিভেটেড কার্বন) হিসেবে কাজ করবে। এই ঘরোয়া পদ্ধতি একদম নিরাপদ ও খুব ভালো। দ্রুত কাজও করে। এটাতে কোনো রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা নেই। কোনো বিষক্রিয়া যদি না–ও থাকে তাহলেও এটা খাওয়ালে কোনো সমস্যা নেই। এটা মল-মূত্রের সঙ্গে বের হয়ে যাবে।
নাইট্রেট বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে কী করা উচিত?
সবুজ কান্তি নাথ: মোটাদাগে আমার পরামর্শ হচ্ছে, বৃষ্টির পরপর বিশেষ করে অনেক দিন পর বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বিলে গবাদিপশু ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কিছুটা রোদে বিল শুকিয়ে এলে সে সময় ঘাস খাওয়ানো উচিত। এ সময় গবাদিপশু বাড়িতে রেখে খাওয়ানো উচিত। বৃষ্টির কয়েক দিন পর আর অসুবিধা থাকে না। ইউরিয়া দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে সে জমির ঘাস খাওয়ানো উচিত নয়।
দাকোপ এলাকায় প্রচুর তরমুজের চাষ হয়। কিছুদিন আগে তরমুজ খেত থেকে উঠেছে। তরমুজ চাষে ব্যবহৃত দানাদার কীটনাশক গলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষাক্ত হওয়া পানি খেয়ে এসব গরু মারা যেতে পারে বলে একটা ধারণাও কিন্তু এলাকার মানুষের মধ্যে আছে।
সবুজ কান্তি নাথ: অরগ্যানো ফসফেট বিষক্রিয়া বা কীটনাশকের প্রভাবের কারণে গরুগুলো মারা গেলে উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর এত দ্রুত মারা যেত না। তবে কৃষকের ব্যবহার করা কীটনাশকের কারণে পশুর কিডনি ও লিভারে জটিলতা হতে পারে বা দীর্ঘ মেয়াদে একটা প্রভাব পড়তে পারে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মারা যাবে না। আর কীটনাশক ব্যবহার করা জমিতে পরে পানি জমলে আর সে পানি খেলে তাৎক্ষণিক খুব বেশি প্রভাব পড়ার কথা না।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সবুজ কান্তি নাথ: আপনাকেও ধন্যবাদ।