প্রধান শিক্ষককে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে বিদায় সংবর্ধনা
বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে একটি সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ির প্রস্তুত। বিদ্যালয় ভবন থেকে ঘোড়ার গাড়ি পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষক বের হয়ে এলেন। তাঁকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানায় সবাই। প্রধান শিক্ষক উঠে বসলেন ঘোড়ার গাড়িতে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাঁকে শোভাযাত্রা করে পৌঁছে দিল বাড়িতে।
সোমবার সকালে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দৃশ্য ছিল এমন। প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমেদ খান দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে গেছেন। তাই প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানাতে শিক্ষার্থীরা এসব আয়োজন করে। এ আয়োজন দেখে সুলতান হোসেন খান আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুলতান আহমেদ খান ১৯৯২ সালে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (গণিত) হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিছুদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে তিনি প্রধান শিক্ষক হন। সোমবার অবসরে যান তিনি। দীর্ঘ ৩২ বছর শিক্ষকতা জীবনে শুধু ১ বছরের জন্য ভান্ডারিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে বদলি হয়েছিলেন। আবার তিনি ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় যোগদান করেন। তাই শিক্ষকতা জীবনের শেষ দিনে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এমন আয়োজন দেখে তিনি আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
সকালে তাঁর অবসর উপলক্ষে বিদ্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত সভায় সুলতান আহমেদ খান বলেন, ‘চাকরিজীবনে আমি তেমন ছুটি নিইনি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করেছি। সব সময় চিন্তা ছিল শিক্ষার্থীদের নিয়ে। কোনো ক্লাসের শিক্ষক না এলে আমি নিজেই ক্লাস নিয়েছি। চাকরিজীবনে কোনো দিন অনিয়ম আমি করিনি। শিক্ষার্থীদের সব সময় নিজের সন্তানের মতো শিক্ষা দিয়েছি। সব সময় চেয়েছি, শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে।...আমি সকলের কাছে দোয়া চাই, যাতে শেষ জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে পারি। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন বাকি জীবন যেন মহান আল্লাহ আমাকে সুস্থ রাখেন।’
বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নান্টু রঞ্জন বলেন, ‘সুলতান স্যার ছিলেন একজন সাদা মনের মানুষ। এমন শিক্ষক আর হয়তো আমরা পাব না। স্যারের নীতি–আদর্শকে সামনে রেখে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালাব।’