চট্টগ্রাম ওয়াসার গাড়িচালক তাজুল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত
চট্টগ্রাম ওয়াসার (বরখাস্ত) গাড়িচালক তাজুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী খাইরুন নেসার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম শুনানি শেষে তা গ্রহণ করেন।
দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসার গাড়িচালক তাজুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাঁচতলা বাড়িসহ ৬০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় দুদকের অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। এখন মামলাটির বিচার শুরু হবে পরবর্তী তারিখে।
তাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম ওয়াসা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি তিনি বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদকও। ১৯৮৯ সালে দুই হাজার টাকা বেতনে চট্টগ্রাম ওয়াসায় চালকের সহকারী (হেলপার) হয়ে চাকরি শুরু করেছিলেন তাজুল ইসলাম। সহকারী থেকে হয়েছেন গাড়িচালক। ধাপে ধাপে বেড়ে তাঁর বেতন হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু বেতন যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি বেড়েছে সম্পত্তি।
তাজুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আরও দুটি মামলা রয়েছে। দুর্নীতি ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর দুই বছর আগে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
২০২২ সালের ৫ মার্চ তাজুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী খাইরুন নেসার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। তিন বছর তদন্ত শেষে চলতি মাসের শুরুতে আদালতে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে তাজুলের স্ত্রীর কোনো আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি। স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ করার জন্য স্ত্রীকে পোলট্রি খামারি সাজানো হয়।
চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ততম এলাকা রৌফাবাদের পাশেই পশ্চিম শহীদনগর এলাকা। এলাকার তৈয়্যবিয়া হাউজিং সোসাইটির সরু গলি ধরে কিছুদূর গিয়েই চোখে পড়ে তাজুলের পাঁচতলা বাড়িটি। সেখানে ১৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, স্ত্রী ও নিজের নামে তাজুল ইসলাম নগরের রৌফাবাদ এলাকায় ২০০২ সালে তিন শতক জায়গা কিনে পাঁচতলা বাড়ি করেন। অথচ তাঁর গৃহিণী স্ত্রীর আয়ের কোনো উৎস নেই। নিজের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থকে বৈধতা দিতে স্ত্রীর নামে জমি কিনে পাঁচতলা বাড়ি করেন তাজুল। তাঁরা বাড়িটির অর্ধেক নির্মাণের ব্যয় দেখান ২৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা। কিন্তু তদন্তে দুদক গণপূর্ত চট্টগ্রামের তিন উপপ্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে নিরপেক্ষ পরিমাপ করে পায় ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যাংকে নগদ টাকাসহ অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় আরও ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে মোট ৫৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ পায় দুদক।