খুলনা সিটি নির্বাচনে প্রায় ৫৬ শতাংশ ভোটকেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, পর্যবেক্ষণে থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরা

খুলনা জেলার মানচিত্র

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৫৬ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ৫টি ওয়ার্ডের সব কটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ৩টি ওয়ার্ডে সব কটিই রয়েছে ঝুঁকির বাইরে। ১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রায় ৮১ শতাংশ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ঝুঁকিমুক্তগুলোকে ‘সাধারণ’ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে। ওই গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্র অনুযায়ী ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।  

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, প্রার্থী বা প্রভাবশালীদের বাড়ির কাছাকাছি স্থাপিত কেন্দ্র, অতীতে যেসব ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা হয়েছিল, যেসব ভোটকেন্দ্রে যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ, এলাকার গোয়েন্দা তথ্যসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রে তালিকা নিয়ে ওই কেন্দ্র চিহ্নিতকরণের কাজটি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সিটি করপোরেশনে ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। ওই ওয়ার্ডগুলোর আওতায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২৮৯টি। এবার নির্বাচনে ১৬১টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ ও ১২৮টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেএমপি।

২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেকের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু। নির্বাচনে দুই শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় ওই বছর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রও ছিল বেশি। সেবার প্রায় ৮১ শতাংশ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।  

এবারের তালিকা অনুযায়ী ৪, ৬, ৭, ১০ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সব ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বাদে অন্য সব কেন্দ্র রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায়। তবে ১৩, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কোনো কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই তিন ওয়ার্ডে ২৩টি কেন্দ্র রয়েছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৬টি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৯টি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪টি, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ১২টি ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৯টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ওই ৫টি ওয়ার্ডের ৪০টি ভোটকেন্দ্রের সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।  

এর বাইরে ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি কেন্দ্রের ৬টি, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৪টি কেন্দ্রের ১টি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১১টি কেন্দ্র ৪টি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৬টি কেন্দ্রের ৩টি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৫টি কেন্দ্রের ২টি, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩টি কেন্দ্রের ৯টি, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ৭টি কেন্দ্রের ৫টি, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি কেন্দ্রের ৪টি, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২টি কেন্দ্রের ৪টি, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৭টি কেন্দ্রের ৩টি, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩টি কেন্দ্রের ১০টি, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ কেন্দ্রের ৫টি, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রের ৪টি, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি কেন্দ্রের ৬টি, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রের ৫টি, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি কেন্দ্রের ৬টি, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি কেন্দ্রের ৩টি, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬টি কেন্দ্রের ১০টি, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রের ৬টি, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি কেন্দ্রের ৩টি, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রের ৮টি ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৫টি কেন্দ্রের ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ৭ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার এবং সাধারণ প্রতিটি কেন্দ্রে ৭ জন পুলিশ ও ১০ জন আনসার মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ৭১টি মোবাইল প্যাট্রোল টিম, ২০টি অতিরিক্ত মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স ও প্রতিটি থানায় স্ট্যান্ডবাই ফোর্স থাকবে। নির্বাচনের কাজে মোট ৪ হাজার ৮২০ জন পুলিশ ও ৩ হাজার ৪৬৭ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া বিজিবি ও র‍্যাব সদস্যরাও নির্বাচনের দিন মাঠে থাকবেন।

সিসিটিভি ক্যামেরা

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য গতবারের মতো এবারও ২৮৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। তবে গতবারের চেয়ে ভোটকক্ষ বাড়ানো হয়েছে ১৭১টি। এবার ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৭৩২টি। গত নির্বাচনে ভোটকক্ষ ছিল ১ হাজার ৫৬১টি।
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, তা দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের সুবিধাজনক স্থানে দুটি করে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। মোট ২ হাজার ৩১০টি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে সব ভোটকেন্দ্র।

নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড রাখা হবে। যদি কোনো কেন্দ্রে বা কক্ষে অনিয়মের খবর পাওয়া যায়, তাৎক্ষণিকভাবে তা দেখা যাবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর নিজ কার্যালয়ে বসে ও নির্বাচন কমিশনাররা ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে বসে সার্বক্ষণিক ভোটের চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন।  

এবার খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ১০ জুন রাত ১২টার পর আর প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন না প্রার্থীরা। ১২ জুন ইভিএমে এই সিটির  ভোট গ্রহণ করা হবে।