এইচএসসির ফল প্রত্যাখ্যান করে ময়মনসিংহে অকৃতকার্যদের বিক্ষোভ, শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও

ময়মনসিংহে এইচএসসির ফলাফল প্রত্যখ্যান করে অকৃতার্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও করে। রোববার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ এবং শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করেছেন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে এসব কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে গরমিল করে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। এসএসসির ফলাফল অনুযায়ী সব বিষয়ের ম্যাপিং করে বৈষম্যহীন ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান তাঁরা।

বেলা ১১টায় নগরের টাউন হল মোড়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে এইচএসসিতে অকৃতকার্য শতাধিক শিক্ষার্থী এসে জড়ো হন। সেখানে তাঁরা কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে নগরের কাঠগোলা এলাকায় শিক্ষা বোর্ডের কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা করেন। ‘বৈষম্যহীন রেজাল্ট চাই’, এই দাবিতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের কর্মসূচির ব্যানারে উল্লেখ করে, ‘আমরা রেজাল্টে কোনো রকম বৈষম্য চাই না। যাঁদেরকে বৈষম্য রেজাল্ট দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মৃত্যুর বিনিময়ে আমরা এমন বৈষম্য রেজাল্ট মানব না।’

দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা বোর্ড ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটকে পুলিশ অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীরা ফলাফল বাতিল চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের সামনের সড়কে ইট ফেলে ও রাস্তায় বসে অবরোধ করেন। এতে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝাতে আসেন শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. সফিউদ্দিন সেখ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবির পক্ষে অনড় থেকে জোরপূর্বক শিক্ষা বোর্ড ভবনের প্রধান ফটকের বাধা উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বোর্ড চেয়ারম্যান মো. আবু তাহেরের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা চলার সময় যাত্রীদের বিষয় বিবেচনা করে পৌনে এক ঘণ্টা পর বেলা ১টা ১৫ মিনিটে সড়ক থেকে ব্যারিকেড তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া নাসিরাবাদ কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাফিউল করিম (রিসাত) বলেন, এবারের ফলাফলে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে গরমিল করেছে। কোন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোন বিষয় ম্যাপিং করেছে, তা বলতে পারেনি। পরীক্ষায় অ্যাটেন্ড না করেই অনেকে পাস করেছেন। জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মনিষা আক্তার বলেন, ‘আমি সব পরীক্ষায় অংশ নিলেও আমার ফলাফল আসেনি।’

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনেকে জানান, তাঁদের ফলাফল জিপিএ–৫–এর বদলে ফেল এসেছে। নগরের মুসলিম গার্লস কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবা আক্তার (হিয়া) আইসিটিতে অকৃতকার্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ফেল করার মতো পরীক্ষা দিইনি। কিন্তু ফেল দেখানো হয়েছেন। এ ফলাফল আমরা মানি না।’

বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা পুনরায় এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের জন্য বেলা তিনটার দিকে আবেদন করেন বোর্ডে। আবেদনে বলা হয়, ১৫ অক্টোবর যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যযুক্ত।

আন্দোলনকারীরা তিনটি দাবি জানিয়েছেন। ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যযুক্ত ফলাফলকে বাতিল ঘোষণা করতে হব; দেশের সব বোর্ডের সঙ্গে সমভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে পুনরায় বৈষম্যহীনভাবে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ময়মনসিংহের সব বিষয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় সবাইকে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত করতে হবে। স্মারকলিপি দিয়ে বেলা তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা বোর্ড ত্যাগ করেন।

১৫ অক্টোবর ঘোষিত ফলাফল শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ময়মনসিংহ বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭৭ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৭ হাজার ৪৫৩ ও ছাত্রী ৪০ হাজার ১৬৮ জন। পরীক্ষায় পাস করেছেন ৪৯ হাজার ৬৯ জন; পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২। এর মধ্যে ছাত্র পাস করেছেন ২২ হাজার ৯৩৫ জন এবং পাসের হার ৬১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর ছাত্রী পাস করেন ২৬ হাজার ১৩৪ জন এবং তাঁদের পাসের হার ৬৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

শিক্ষা বোর্ডটিতে জিপিএ–৫ পাওয়া মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ৮২৬। তাঁদের মধ্যে ২ হাজার ১০৯ জন ছাত্র ও ২ হাজার ৭১৭ জন ছাত্রী। বোর্ডে গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার এবার। এ বছর আইসিটি ও ইংরেজি বিষয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন বলে জানান বোর্ড চেয়ারম্যান।

ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্মারকলিপি আমরা আন্তবোর্ডে পাঠিয়ে দেব। শিক্ষার্থীরা যদি পরীক্ষকদের কারণে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তা আমরা দেখব। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা পুনর্নিরীক্ষণ করব। আমরা সর্বোচ্চ সহমর্মী হয়েই এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছি, কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী অটোপাস দাবি করছে, এটি আমাদের হাতে নেই।’