আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার জেরে গ্রামটিতে থমথমে অবস্থা
গ্রামে প্রবেশের মুখগুলোতে পুলিশের পাহারা, গাড়িতে করে টহল দিচ্ছে পুলিশ। বাইরে থেকে জোটবদ্ধ হয়ে কারও প্রবেশের সুযোগ নেই। নিহতের আত্মীয়স্বজন আর সংবাদকর্মীরা ঘোরাঘুরি করছেন। চারদিকে থমথমে একটা অবস্থা। এর মধ্যে কেউ কেউ নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজেদের বাড়িঘরের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। এই অবস্থা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মীনগ্রামের।
আজ সোমবার ভোররাতে এই গ্রামের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান (৪৩) ওরফে রিপন একই দলের প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হামলায় খুন হয়েছেন। নিহতের ভাতিজা তুহিন শেখ জানান, আজ বিকেলে চাচা রিপন মেম্বারের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। নিহতের বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। কোলের শিশুটি বুকে নিয়ে কাঁদছেন নিহত হাবিবুরের স্ত্রী। তাঁরা হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন।
পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে ঝিনাইদহের শৈলকুপার আবাইপুর ইউনিয়নের আবাইপুর গ্রামে হাবিবুর রহমান নিহত হন। তিনি মীনগ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে। আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য। একই সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর। এ ঘটনায় রাশিদুর রহমান রাসেল ও আমিনুর রহমান নামের আরও দুজন আহত হয়েছেন, তাঁরা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মীনগ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ অক্টোবর মীনগ্রাম বাজারে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম ওরফে দুলালের একটি পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে কে বা কারা। এই নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাই এবং নজরুল ইসলামের স্থানীয় সমর্থকদের মধ্যে বিবাদ চলছিল। এর মধ্যে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ও রাতে শৈলকুপা থানায় কয়েক দফা বিরোধ মীমাংসায় বৈঠক হয়। কিন্তু অমীমাংসিত থাকে সেই বৈঠক। দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে উভয় পক্ষ থানা থেকে বেরিয়ে যান।
থানার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মীনগ্রামের আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা আগে থেকেই ওত পেতে ছিল। তাঁরা তিনটি মোটরসাইকেলে করে আটজন বাড়ি ফিরছিলেন। সঙ্গে ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমানও ছিলেন। আবাইপুর বাজার পার হতেই তাঁদের পিটিয়ে আহত করেন প্রতিপক্ষের সমর্থকেরা। এ সময় স্থানীয় লোকজন তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাবিবুরকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক নাঈম সিদ্দিকী বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের শরীরে পেটানোর আঘাত আছে বলে মনে হয়েছে। নিহত হাবিবুর রহমানের মাথায় বড় ধরনের আঘাত রয়েছে। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হতে পারে।
আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খালেকুজ্জামান ওরফে উকিল মোল্লা বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অবৈধ পয়সার জোরে এক ব্যক্তি এলাকার রাজনীতি না করলেও প্রভাব বিস্তার করতে চান। যে কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটল।
গ্রামটির বাসিন্দা তুহিন শেখ বলেন, নিহত রিপন ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের সংসদ সদস্যের সমর্থক। প্রতিপক্ষ দুলাল বিশ্বাসের সমর্থকেরা এই হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা হামলার পর প্রতিপক্ষরা বাড়িঘরেও হামলা চালান। এর মধ্যে হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। এ সময় উত্তেজিত হয়ে হাবিবুরের সমর্থকেরাও কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করেন। তবে সকালে পুলিশ আসার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঠাকুর দাস বলেন, এ ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। এ ঘটনায় বিকেল চারটা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি, কাউকে এখনো আটক করা হয়নি।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে এসে জানান, তাঁর সমর্থক হাবিবুর রহমানকে যাঁরা পিটিয়ে হত্যা করেছে, তাদের শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, খুন মহাপাপ, এই পাপীদের শাস্তি হবেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি ঢাকাতে আছি, শুধু শুনেছি একজন মারা গেছেন। তবে কী দিয়ে কী হয়েছে, তা বলতে পারছি না।’