জামালপুরে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে জামালপুরে যমুনা নদীর পানি হু হু করে বেড়েই চলেছে। নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় প্রায় ৬২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। লোকালয়ে পানি ঢুকে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা, নদীতীরবর্তী ও দুর্গম চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জামালপুর কার্যালয়ের পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান বলেন, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে গত দুই দিনের তুলনায় আজ পানি একটু ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীকাল শনিবার থেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কম রয়েছে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ। এসব অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ হতদরিদ্র। যমুনার ঢলে অনেকের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে থাকায় অনেক দিনমজুরের আয়রোজগার বন্ধ। যমুনার পানিতে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে নদীতীরবর্তী চরাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে।
গত বুধবার থেকে এসব এলাকার বেশির ভাগ লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। এর মধ্যে নোয়ারপাড়া-ইসলামপুর সড়কের আমতলী বাজার এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে তীব্র স্রোত ব্যয়ে যাচ্ছে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। একইভাবে ইসলামপুর-গুঠাইল সড়কের দেলিরপাড় এলাকার ড্রাইবেশন ডুবে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকটি মাটির রাস্তাও ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া পানির তোড়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ী সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ আছে। দুর্গত এলাকার অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও রাস্তায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।
জামালপুরের ইসলামপুরের চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম বলেন, ‘ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি খুব দ্রুত লোকালয়ে প্রবেশ করছে। অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এতে মানুষ এখন বেকার হয়ে পড়ছে। ত্রাণসামগ্রীর প্রয়োজন রয়েছে। শুনেছি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো হাতে পাইনি।’
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়নটি যমুনা নদীর একেবারে তীরবর্তী। এ ইউনিয়নে সবার প্রথম বন্যার পানি প্রবেশ করে। ইউনিয়নটির ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মুক্তাদির বলেন, ‘গতকাল থেকে ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমার ওয়ার্ডের কেল্লাকাটা এলাকায় পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে ১০টি বাড়ি ভেসে গেছে। এখন পুরো ওয়ার্ডের ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়েছে পড়েছে। এখনো কোনো ধরনের ত্রাণসামগ্রীর বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।’
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের আংশিক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় ১২০ মেট্রিক টন চাল ও ৩৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ পেয়েছি। ইতিমধ্যে ২০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বাকিগুলোও বিতরণ করা হবে। বন্যা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের সকল প্রস্তুতি নেওয়া রয়েছে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা য়ায়, গত মঙ্গলবার থেকে যমুনার পানি বেড়ে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন, চিনাডুলী, পাথর্শী, সাপধরী, বেলগাছা, কুলকান্দি, নোয়ারপাড়া, পলবান্দা; দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, চিকাজানী, চুকাইবাড়ী, বাহাদুরাবাদ, চর আমখাওয়া, ডাংধরা, পাররামরামপুর, হাতিভাঙ্গা, পৌরসভার আংশিক; মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া, আদ্রা, মাহমুদপুর, নাংলা, কুলিয়া; মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ও জোড়খালী ইউনিয়নের এলাকা প্লাবিত হয়। এতে ৬৩ হাজার ৩৩২ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।
জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ওই সব এলাকায় ১৯০ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ পর্যাপ্ত রয়েছে। যেকোনো এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের খবর পেলেই সেখানে দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।