লালমনিরহাটে গৃহবধূ হাসিনা বেগমের বিচ্ছিন্ন মাথা পাওয়া গেছে; সতিন গ্রেপ্তার, স্বামী পলাতক

নিহত গৃহবধূ হাসিনা বেগমের সতীন মেহেরুন্নেসা
ছবি: প্রথম আলো

লালমনিরহাটের আদিতমারীর দুর্গাপুরের দীঘলটারী গ্রামের নিহত গৃহবধূ হাসিনা বেগমের (৪১) বিচ্ছিন্ন মাথা অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকার একটি তামাকখেতে পুঁতে রাখা অবস্থায় মাথাটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ ও লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দুর্গাপুর বিওপি ক্যাম্পের সদস্যসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বাদল কুমার মণ্ডল বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুর এলাকা থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত হাসিনা বেগমের স্বামী আশরাফুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী মেহেরুন্নেসাকে (৪৪) করে সদর থানায় নিয়ে আসা হয়। এরপর আজ শনিবার সকালে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি হাসিনা বেগমের বিচ্ছিন্ন মাথার বিষয়ে তথ্য দেন।

আরও পড়ুন

সেই তথ্যানুযায়ী আদিতমারীর দুর্গাপুরের কুটিবাড়ি কাউয়ার চর এলাকায় বাঁশঝাড়ের একটি তামাকখেত খুঁড়ে মাথাটি উদ্ধার করা হয়। জায়গাটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আনুমানিক ১৫০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে, ৯২৫/৯ এস সীমান্ত পিলার এলাকা। হাসিনা বেগমের কাটা মাথা উদ্ধারের স্থানটি দীঘলটারী গ্রামে তাঁর স্বামী আশরাফুল ইসলামের বাড়ির আনুমানিক ৪০০ গজ দূরে।

এর আগে গত বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের বামনটারী এলাকার একটি ভুট্টাখেত থেকে মাথাবিহীন অজ্ঞাতনামা এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানার পুলিশ। পরে হাতের আঙুলের ছাপ থেকে রংপুরের সিআইডি পুলিশ নিশ্চিত করে, মরদেহটি আদিতমারীর দীঘলটারী গ্রামের কাশেম আলীর মেয়ে হাসিনা বেগমের। এরপর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ওই মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। মরদেহটি লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে। নিকটাত্মীয়দের কেউ এলে তাঁদের কাছে হাসিনা বেগমের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে সদর থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

ঘটনার পর থেকে নিহত হাসিনা বেগমের স্বামী ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলাম ও তাঁর প্রথম স্ত্রী মেহেরুন্নেসা উধাও হয়ে যান। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সদর থানার পুলিশ মেহেরুন্নেসাকে আটক করে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য সদর থানায় নিয়ে আসে। আজ শনিবার সকালে আটক মেহেরুন্নেসা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁর সতিন হাসিনা বেগমের বিচ্ছিন্ন মাথা পুঁতে রাখার তথ্য দেন।

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরনবী ও সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বাদল কুমার মণ্ডল এক প্রশ্নের জবাবে জানান, মেহেরুন্নেসার দেওয়া তথ্যমতে, অনুসন্ধান করে নিহত গৃহবধূ হাসিনা বেগমের কাটা মাথা উদ্ধার করা হয়। মেহেরুন্নেসাকে হাসিনা বেগমের হত্যা মামলায় এখন গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রোববার তাঁকে লালমনিরহাটের আদালতে তোলা হবে। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। পাশাপাশি নিহত হাসিনা বেগমের পলাতক স্বামী আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে জোর চেষ্টা চলছে।

ইতিমধ্যে পলাতক ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলামের রক্তমাখা কাপড়, হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো দেশীয় অস্ত্র আলামত হিসেবে জব্দ করেছে পুলিশ। প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে হাসিনা বেগমকে তাঁর স্বামীর বাড়িতে দেখা যায়নি। এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী যেই ভুট্টাখেতে হাসিনা বেগমের লাশ পাওয়া গেছে, সেই খেতের মালিক মো. শফিকুল ইসলাম।