এখনো খোলা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনফাইল ছবি: প্রথম আলো

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও এখনো খোলা হয়নি।

তবে কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যেগুলো হাইকোর্টের নির্দেশিত ছিল। ফুলপরীকে নির্যাতনের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, হল ও ছাত্রলীগের পৃথক চারটি কমিটি গঠন করা হয়। সব কটি কমিটিতেই প্রমাণিত হয়েছে ফুলপরীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য) অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন,‘উপাচার্য ছুটিতে থাকায় তদন্ত প্রতিবেদন খোলা হয়নি। শনিবার (আজ) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে উপাচার্য সভাপতি। তিনি না থাকায় এত দিন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে সভার পর সবকিছু দৃশ্যমান হবে।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরীকে। এ ঘটনায় ফুলপরী নিজে লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি দপ্তরে অভিযোগ দেন। অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীর নাম আসে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। সব কটি তদন্তে নির্যাতন প্রমাণিত হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে আসা শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষার কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার (সাসপেন্ড) করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সানজিদা ছাড়া অপর চার ছাত্রী হলেন হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান। ফুলপরী খাতুন যাতে নির্ভয়ে স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন চালিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য তিন দিনের মধ্যে তাঁর পছন্দ অনুসারে হলে তাঁকে আসন বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফুলপরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কুষ্টিয়া ও পাবনার পুলিশ সুপারসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ ওই পাঁচজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে।

রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্র বলছে, হল কমিটির সিদ্ধান্তে অভিযুক্তদের হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে প্রাধ্যক্ষকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই জেলার পুলিশ সুপারকে ফুলপরীকে নিরাপত্তা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলেও তাঁদের মধ্যে তেমন কোনো অনুশোচনা দেখা যাচ্ছে না। তাঁদের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সানজিদার সুসম্পর্ক রয়েছে। এ জন্য ক্যাম্পাস থেকেও জোরালো কোনো সিদ্ধান্ত না-ও আসতে পারে বলে ধারণা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

যোগাযোগ করা হলে ফুলপরী খাতুন প্রথম আলোকে বলেন,‘শনিবার বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসে যাব। আমি চাইব অভিযুক্ত প্রত্যেককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হোক।’