খালের জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করছেন চেয়ারম্যানের জামাতা
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় সরকারি খাল দখল করে পাকা বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। খালটির নাম মরা খাল। গত সোমবার নির্মাণকাজ বন্ধ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মো. জামাল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে বাড়ি নির্মাণের জায়গাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন বলে উল্লেখ করেছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সরকারি মরা খালের জায়গা দখল করে মো. বেলাল (৩০) ও তাঁর ভাই মো. আরাফাত (২৫) পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ করছেন। তাঁরা উপজেলার উত্তর পদুয়া খন্দকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি ও শত শত একর কৃষিজমি ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাব্বির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আমরা বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। জায়গাটি পরিদর্শন করব। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
খালের জায়গা দখলের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জায়গাটি পরিমাপ করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. শহিদুল ইসলাম। পরিমাপের পর তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাকা বাড়িটি মোট আড়াই শতক জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেকই সরকারি খাসজমি অর্থাৎ খালের জমি।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে ঠাকুরদিঘি বাজার। সেখান থেকে জঙ্গল পদুয়া সড়ক হয়ে আধা কিলোমিটার পূর্বে গেলেই সগীরপাড়া সড়কের পশ্চিম পাশ লাগোয়া মরা খাল। সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, খালটির মাঝখানে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে চার কক্ষবিশিষ্ট বাড়ির পিলার স্থাপন করা হয়েছে। চলছে ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি। ভবনটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ ও প্রস্থ ২৫ ফুট। তবে সে সময় ভবনের আশপাশে কাউকে দেখা যায়নি।
স্থানীয় লোকজন জানান, ১৫ দিন আগে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন মো. বেলাল। তিনি পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীর মেয়ের জামাই। খালের ওপর ভবন নির্মাণের ফলে পদুয়া ইউনিয়নের টেন্ডলের পাড়া, পেন্ডালির পাড়া, উত্তর খন্দকারপাড়া, জহির বাপের পাড়া, ইউনুস সওদাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার পানিনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাবে। এতে লোকালয় ও কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অভিযুক্ত মো. বেলাল প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণাধীন বাড়ির ২ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জায়গা। কিছু অংশ সরকারি খাস জায়গা। পানি চলাচলের জন্য জায়গা রেখেই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী বলেন, যে জায়গায় ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেটি খতিয়ানভুক্ত। মো. বেলাল সেটি কিনেছেন। জায়গাটি সরকারি খাস জায়গা নয়।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইনামুল হাছান বলেন, সরকারি খাল দখলের পর পাকা বাড়ি নির্মাণ করে থাকলে অবশ্যই তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।