কুমিল্লায় নবাব ফয়জুন্নেসার প্রতিকৃতির কালি মুছতে গিয়ে হামলার শিকার বাসদ নেতা

নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীর প্রতিকৃতিতে লেপন করা কালি মুছতে গিয়েছিলেন বাসদ নেতা আবদুর রাজ্জাক। আজ মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লা নগরের ঈদগাহ মাঠের মোড়েছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিকৃতিতে লেপন করা কালি মুছতে গিয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) এক নেতা হামলার শিকার হয়েছেন। হামলাকারীরা পিস্তলের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত করে ফাটিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবদুর রাজ্জাক নামে ওই নেতা। আজ মঙ্গলবার সকালে নগরের নগরের সার্কিট হাউস ও ঈদগাহ মাঠের মোড়ের গোলচত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার শিকার আবদুর রাজ্জাক (৭২) বাসদের কুমিল্লা জেলার সমন্বয়ক। তাঁকে কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নগরের রাজগঞ্জ এলাকার রাজবাড়ী কম্পাউন্ডে অবস্থিত বাসদ কার্যালয়েই বর্তমানে থাকেন তিনি।

বাংলার প্রথম নারী নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির প্রতিকৃতি কুমিল্লা নগরের সার্কিট হাউস ও ঈদগাহ মাঠের মোড়ের গোলচত্বরে স্থাপন করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুষ্কৃতকারীরা নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ও মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে কালিমা লেপন করে বিকৃত করে দেয়। ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ১৮৩৪ সালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁও এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।

সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুর রাজ্জাক বলেন, শিক্ষার অন্যতম অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী। তিনি অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা মসজিদসহ বহু উপাসনালয়, হাসপাতাল তৈরি করেছেন। জমিদারির সম্পদ জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন। এই মহীয়সী নারী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের প্রতিকৃতির ৫ আগস্টের পরে কে বা কারা কালিমা লেপন করেছিল। বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি। এ জন্য কয়েক দিন ধরেই পরিকল্পনা করছিলাম কালিগুলো মুছে ফেলার।

আরও পড়ুন

আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আজ সকাল ৮টার দিকে তিনি প্রতিকৃতির কালি মুছতে গেলে যান। এ সময় সেখানে উপস্থিত মানুষজন তাকে এ কাজে সহায়তা করছিলেন। এমন সময় ৭ থেকে ৮ জন দুর্বৃত্ত অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীদের একজন সম্ভবত কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা। তিনি উপস্থিত মানুষজনকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন। এরপর কালি মোছার সময় গোলচত্বর থেকে তাকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন হামলাকারীরা।

আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে হামলাকারীদের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি পিস্তলের বাট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। এতে মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে শুরু করে। তিনি আমাকে বুকে ও পিঠে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিলেন। এ সময় আমাকে চরম গালমন্দ করেন। পরে তিনি চলে গেলে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।’

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন কুমিল্লার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনিক সংগঠক ও কর্মীরা। হামলাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ওই চত্বরে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামসহ কুমিল্লার কয়েকজন কীর্তিমান মানুষের প্রতিকৃতি আছে। সেখানে যারা কালিমা লেপন করেছে, তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।’

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বাসদের ওই নেতা কালি মুছতে গেলে কয়েকজনের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে আবদুর রাজ্জাকের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের বিচার দাবি করেছেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। আজ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের পর একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী ৭১–এর মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক চেতনাকে অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, স্মৃতিস্তম্ভ, মাজার, মন্দিরে হামলা এবং প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গের ওপর ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে চলেছে। কুমিল্লায় নবাব ফয়জুন্নেসা ও মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের প্রতিকৃতির কালি মুছতে গেলে কতিপয় দুষ্কৃতকারী বাসদ নেতা আবদুর রাজ্জাকের ওপর হামলা চালায়।’