স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে জাপার সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হকের মনোনয়নপত্র দাখিল
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য আইনজীবী জিয়াউল হক মৃধা এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি সরাইল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তরে উপস্থিত হয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও আসনটির সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
জাপার কেন্দ্রীয় প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল হক মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় সরাইল উপজেলা জাপার সভাপতি হুমায়ুন কবীর, সহসভাপতি ফজলুল হক মৃধা, তৌফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক, যুগ্ম সম্পাদক আলী নেওয়াজ, কালীকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন শাখা জাপার সভাপতি ছায়েদ হোসেন, উপজেলা যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ মিয়া, উপজেলা ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক রাসেল লস্করসহ শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দলের গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং দলীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এ জন্য তাঁদের কাছে মনোনয়ন চাইনি। এ ছাড়া এই আসনে নৌকা বা ধানের শীষ প্রতীকের কোনো প্রার্থী নেই। তাই এ আসনের জনগণের অনুরোধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি ১০ বছর সংসদ সদস্য ছিলাম। ওই সময়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এ জন্য এলাকার লোকজন আবারও আমাকে প্রার্থী হতে উৎসাহিত করছেন।’
সরাইল উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা জিয়াউল হকের সঙ্গে থাকবেন। তিনি এলাকার পরীক্ষিত নেতা। তাঁর জয়ের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিয়াউল হক প্রথম জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে অংশ নেন। তখন তিনি ছিলেন সরাইল উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি (পরে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান)। ওই নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান ফজলুল হক আমিনী। ওই নির্বাচনে জিয়াউল হক ৪৯ হাজার ৩৯৯ ভোটের ব্যবধানে ফজলুল হক আমিনীকে পরাজিত করেছিলেন। ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন দশম নির্বাচনেও জিয়াউল হক লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিয়াউল হক দলীয় প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তখন তাঁর মেয়ের জামাতা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া পেয়েছিলেন লাঙ্গল প্রতীক। তবে নির্বাচনের দুই দিন আগে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। জামাই-শ্বশুরের নির্বাচনী দ্বন্দ্বের কারণে দুবারের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক পরাজিত হন।
এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচনের জন্য গত ২৮ ডিসেম্বর রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে জাতীয় পার্টি। এরপর গত মঙ্গলবার প্রার্থী পরিবর্তন করে যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। তিনি সরাইল উপজেলার চুন্টা গ্রামের বাসিন্দা।
আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দলের মনোনয়ন পেয়েছি। দলীয় লোকজন আমার পক্ষেই থাকবেন।’
নির্বাচনে নিজের অবস্থান সম্পর্কে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দলের বিপক্ষে যেতে পারব না। দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমি তাঁর পক্ষেই থাকব।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৯ জন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯ এবং আশুগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ১ লাখ ৩২ হাজার ২৪০ জন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন। তিনি পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট। ১১ ডিসেম্বর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।