৭ কিলোমিটার হেঁটে দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ ময়দানে নামাজ আদায়
দেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাতে অংশ নিতে কয়েক দিন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আবদুল কুদ্দুস (৫৮)। বুধবার সাইকেলটি মেরামত করেও রেখেছিলেন। রাত সাড়ে তিনটায় ঘুম ভাঙলে কুদ্দুস দেখেন, সাইকেলের চাকা পাংচার। অগত্যা গোসল সেরে প্রস্তুত হয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা দেন ঈদের নামাজের জন্য। সাত কিলোমিটার হেঁটে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর রেলস্টেশনে পৌঁছান। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে দিনাজপুর স্টেশনে পৌঁছান সকাল পৌনে সাতটায়। লাখো মুসল্লির সঙ্গে নামাজ আদায়ের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে কুদ্দুসের। তবে খুতবা ও মোনাজাতে অংশ নিতে না পারায় খানিকটা মন খারাপ তাঁর। কেননা ফিরতি ট্রেন ধরার তাড়া ছিল।
কুদ্দুসের বাড়ি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ গ্রামে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় দিনাজপুর স্টেশন প্ল্যাটফর্মে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। জানালেন, তিন বছর থেকে চেষ্টা করছেন এখানে নামাজ পড়ার। নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। তবে এবার নামাজ পড়তে পারায় দারুণ খুশি কুদ্দুস। ট্রেন থেকে নামার পর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের কাছে জানতে পারেন, ট্রেন ফেরত যাবে সোয়া নয়টায়। এ জন্য নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা দিয়েছেন ট্রেনের কাছে। যদিও ট্রেনটি ফেরত গেছে সকাল সাড়ে ১০টায়।
কুদ্দুসের মতো অনেক মুসল্লিই দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা-উপজেলা থেকে এ মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন। অনুকূল আবহাওয়ায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল নয়টায় নামাজ শুরু হয়। নামাজে ইমামতি করেন দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মসজিদের ইমাম মাওলানা শামসুল হক কাসেমী।
দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দান এখন মুসল্লিদের কাছে একটি আবেগের নাম। সকাল থেকে জায়নামাজ নিয়ে ঈদগাহে আসেন মুসল্লিরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কানায়–কানায় পূর্ণ হয় মাঠ। আয়োজকদের দাবি, এবার জামাতে ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের মধ্যে ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম; স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম; জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ; পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ; পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবু তৈয়ব আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এবার কী পরিমাণ মুসল্লির সমাগম হয়েছে, তা হিসাব করা না গেলেও বিগত বছরের চেয়ে সংখ্যা বেশি ছিল বলে দাবি জেলা প্রশাসনের। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় হুইপ ইকবালুর রহিম দাবি করেন, গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাতে এবার ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দূরের মুসল্লিদের জন্য ট্রেন সার্ভিস দেওয়া হয়েছিল। মানুষ এসে শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করেছেন। প্রতিবছর মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘মক্কা-মদিনার পর এত বড় বৃহৎ ঈদের জামাত কোথাও হয় না। এটি আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের।’
পার্বতীপুর থেকে ঈদের নামাজ পড়তে আসা আবদুল জলিল বলেন, ‘আমার বাড়ি খুলনায়। চাকরির সুবাদে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে থাকি। খুবই ভালো লাগছে, আল্লাহ আমার নসিবে লিখে রেখেছে, এত বড় জামাতে অংশ নিতে পেরেছি। অনেক মুসল্লির সঙ্গে সম্মিলিতভাবে মোনাজাতে অংশ নিতে পেরেছি। আল্লাহ নিশ্চয়ই কবুল করবেন।’
উল্লেখ্য, গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দানের আয়তন ২২ একর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে ছোট পরিসরে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১৫ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য হুইপ ইকবালুর রহিম এখানে মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে মিনার নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ওইবারই প্রথম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেবারও ছয় লক্ষাধিক লোক জামাতে অংশ নেন। ঈদগাহ মিনারটি মোগল স্থাপত্যরীতিতে নির্মাণ করা হয়েছে।