‘খুনিদের যারা বিচার করতে পারবে, তাদের সরকারে দেখতে চাই’

পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে গুলিতে নিহত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাড়িতে মাতম এখনো থামেনি। আন্দোলনে ছাত্র–জনতার জয়ী হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আবু সাঈদের মা–বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলেছেন, সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশ সাঈদকে গুলি করে হত্যা করেছে। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা।

গত ১৬ জুলাই রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে আন্দোলন জোরদার হয়। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।

নিহত আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে জাফরপাড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সাঈদের বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড়। বাবা মকবুল হোসেন, মা মনোয়ারা বেগম, ছোট বোন সুমি খাতুনসহ অন্য স্বজনরা উঠানে বসে আছেন।

এ সময় মা মনোয়ারা বেগম বলে উঠছেন, ‘মোর কইলজার ধনটাক হাসিনা নির্দেশ দিয়া গুলি করিয়া মারছে। এ্যালা শোনোছি দ্যাশ ছাড়ি পালাইছে। এত মানুষ থাকতে কেমন করি পালেয়া গেলো হাসিনা। মুই হাসিনার ফাঁসি চাও।’

আরও পড়ুন
রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মা–বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। গতকাল সোমবার রাত ৯টায়
ছবি: প্রথম আলো

ছোট বোন সুমি খাতুন বলেন, ‘আমার ভাই পরোপকারী ছিলেন। বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। টিউশনির টাকায় গ্রামে শিশুদের বইখাতা কিনে দিতেন। সেই ভাইকে গুলি করে মারা হলো। শেখ হাসিনা আমাদের গণভবনে ডেকে নিয়ে সবার সামনে বলেছিলেন, “তুমি তো শুধু তোমার ভাইকে হারাইছো। কিন্তু আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই শোক নিয়ে আমি বেঁচে আছি।” তিনি ওই সময়ে কেঁদেছিলেন। কিন্তু এসব হচ্ছে তাঁর অভিনয়। তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে এ দেশের অনেক মায়ের বুক খালি করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। তাঁর বিচার এই বাংলার মাটিতেই হতে হবে।’

নিহত সাঈদের ভাই রমজান আলী অভিযোগ করেন, ‘কোটা আন্দোলন করার কারণে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে মিঠু বড়ুয়া নামের এক ছাত্রলীগ নেতা সাঈদের গলা চিপে ধরেছিল। আমরা ওই নেতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

আরও পড়ুন

আরেক ভাই আবু হোসেন বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ছিল ছাত্র হত্যার হুকুমকারী। সেই হাসিনাকে যারা বিদেশে পাঠায় দিলো, তারা কীভাবে সুবিচার করবে?’  

সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘ছেলেটাক গুলি করিয়া মারা পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করছে। খুনির শাস্তি কি বরখাস্ত? এটা মানা যায় না। হাসিনাসহ যে পুলিশ সদস্য খুন করেছে, সবার ফাঁসি চাই। খুনিদের যারা বিচার করতে পারবে, তাদের সরকারে দেখতে চাই।’

ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুতাসিম বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সাঈদের জন্মভূমি পীরগঞ্জ থেকে খালাসপীর সড়কটি তাঁর নামে করা হোক। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে একটি হলের নামকরণ করারও দাবি জানাই।’

আরও পড়ুন