‘স্বর্গের সিঁড়ি’ বেয়ে খাগড়াছড়ি দেখা

পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সিঁড়িপথ। এক এক করে ৩০০টি ধাপ উঠে গেছে ওপরে। নিচে দাঁড়িয়ে দেখলে মনে হয় যেন সত্যিই স্বর্গে যাওয়ার রাস্তা। পাহাড়ের শীতল হাওয়া আর পাখির কিচিরমিচির শুনতে শুনতে ওপরে উঠে গেলেই সুউচ্চ সব পাহাড়ের সবুজ ঢেউ মন কেড়ে নেবে। পাখির চোখে দেখা যাবে খাগড়াছড়ির সৌন্দর্য।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের মায়ুং কপাল পাহাড়ে প্রায় ৩০৮ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সিঁড়ির অবস্থান। ত্রিপুরা ভাষায়, ‘মায়ুং’ অর্থ ‘হাতি’ আর ‘কপাল’ অর্থ ‘মাথা’। পাহাড়টি দেখতে অনেকটা হাতির মাথার মতো। চাকমাদের কাছে পাহাড়টি ‘এদো শিরে মোন’ নামে পরিচিত। তবে বাঙালি পর্যটকদের কাছে পাহাড়টির নাম ‘হাতিমাথা’ বা ‘হাতিমুড়া’। আর সিঁড়িটির নাম স্বর্গের সিঁড়ি।

পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, সিঁড়ি হওয়ার আগে পাহাড়ের চূড়ায় বাসিন্দাদের বর্ষাকালে চলাচল করতে কষ্ট হতো। পাহাড়টির এমন অবস্থা যে তাতে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করা সম্ভব ছিল না। সে সময় ৩০ ফুট লম্বা একটা তুলা গাছকে ধরে তাদের চলাচল করতে হতো। তবে সিঁড়িটি হওয়ার পর যেমন স্থানীয় বাসিন্দাদের কষ্ট কমেছে, তেমনি পর্যটকদের আসাও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ছুটির দিনে অনেক পর্যটক আসেন। পাখির চোখে খাগড়াছড়ি শহর দেখার জন্য স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে তাঁরা উঠে যান পাহাড়ে।

২০১৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করে এই সিঁড়ি। নান্দনিক এই সিঁড়ি যেমন স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে, ঠিক তেমনি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রায় ১১০-১২০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের নির্মিত এ সিঁড়িতে রয়েছে ৩০০টি ধাপ। মূল দৈর্ঘ্য ৩০৮ ফুটের কাছাকাছি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ২০৮ ফুট উচ্চতায় মায়ুং কপাল পাহাড়। এই পাহাড়ে রয়েছে ১৫টি ত্রিপুরা পাড়া। মূলত পাড়াবাসীরাই ব্যবহার করে থাকেন এই সিঁড়ি।

খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কয়ার থেকে পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়ক ধরে গেলে তিন কিলোমিটার দূরে জামতলী যাত্রীছাউনি। সেখানে গাড়ি রাখতে হয়। জামতলী থেকে ‘মায়ুং কপাল’ আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। জামতলী থেকে বাঁ দিকের রাস্তা ধরে চেঙ্গী নদী পার হওয়ার পরপরই ডান দিকে চোখে পড়বে একটি প্রাইমারি স্কুল। সেখান থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে যেতে হয় সিঁড়ির কাছে। প্রায় প্রতিদিনই পর্যটক আসেন এই সিঁড়ি দেখতে। এই পাহাড়ে রাত্রিযাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা বা খাবারের দোকান।