মহাদেবপুরে শতাধিক মানুষের প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমবায় সমিতির লোকজন
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় শতাধিক আমানতকারীর প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে একটি সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা লাপাত্তা হয়েছেন। গ্রাহকেরা আমানতের টাকা নিতে এসে দেখেন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়টি বন্ধ। মুঠোফোনেও প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তাঁরা।
প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্যতিক্রম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড। আমানতের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেহেদী হাসানের শাস্তি দাবি করে সোমবার দুপুরে উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগীরা। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রুবি সুলতানা, দেলোয়ারা খাতুন, প্রতিমা বিশ্বাস, নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
ভুক্তভোগীরা বলেন, ২০১৯ সালে মহাদেবপুর লিচুবাগান এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান ও স্থানীয় আরও কয়েকজন মিলে ব্যতিক্রম ক্ষুদ্র ব্যবসায় সমিতি লিমিটেড স্থাপন করেন। উপজেলা সদরের শিবগঞ্জ মোড় এলাকায় সোনালী ব্যাংকসংলগ্ন একটি বাড়িতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। ওই বাড়িটি মেহেদী হাসানের। কার্যালয়ে একজন ব্যবস্থাপকসহ সাত-আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন।
অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় আশপাশের এলাকার লোকজনের ওই সমবায় সমিতিতে টাকা গচ্ছিত রাখেন। গ্রাহকদের আমানতের বিপরীতে নিয়মিত লভ্যাংশও দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। লভ্যাংশসহ আমানতের টাকা ফেরত চেয়ে আমানতকারীরা সমিতির কর্মকর্তাদের চাপ দেওয়া শুরু করেন। এরপর গত ২২ মে থেকে কার্যালয়টি বন্ধ পান গ্রাহকেরা। ওই দিন থেকেই সমিতির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মেহেদী লাপাত্তা হন। এ অবস্থায় ১৩৯ জন গ্রাহক তাঁদের প্রায় ৫ কোটি টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এরপর তাঁরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী দেলোয়ারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি একজন বিধবা মানুষ। দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার আমার। আমার ছেলেকে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে ২২ লাখ টাকা তাঁরা নেন। এরপর ২২ লাখ টাকার কিছুদিন লাভ দেওয়ার পরে তাঁরা আর টাকা দিচ্ছেন না। টাকাটা না পেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। আমার স্বামী মারা যাওয়ার সময় টাকাগুলো রেখে যান। ওই টাকার ওপর আমার সংসার ও ছেলেদের লেখাপড়া চলত। প্রতিদিন তাঁদের খোঁজে এখানে আসি। আমি আমার টাকা ফেরত চাই ও মেহেদী হাসানের শাস্তি চাই।’
নুরুল ইসলাম বলেন, চালকলে কাজ করে ৫৩ হাজার টাকা জমা করেছিলেন এই সমিতিতে। সেখান থেকে তিনি কোনো লাভ নেননি। সেই টাকা নিয়েও প্রতারক মেহেদী হাসান পালিয়েছেন।
ওই সমিতির সাবেক কর্মচারী বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমি যখন তাঁদের প্রতারণা বুঝতে পারি, তখন তাঁরা আমাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেন। অসহায়-গরিব মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে গেছেন মেহেদী হাসান।’
এ বিষয়ে ব্যতিক্রমী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মেহেদী হাসানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা লিখিত অভিযোগ করলে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।