কিসে আক্রান্ত হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু, জানার চেষ্টা চিকিৎসকদের
রাজশাহীতে মারা যাওয়া দুই বোন মুনতাহা মারিশা (২) ও মুফতাউল মাসিয়া (৫) নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল না। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর চিকিৎসকেরা এখন জানার চেষ্টা করছেন, এই দুই শিশু অন্য কোনো ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল কি না। শিশু দুটির মা–বাবাকে এ জন্য হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়নি।
গতকাল রোববার রাতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পৌঁছান। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, মাইনুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রাজশাহীতে এসেছেন। তাঁরা ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা বিভিন্ন রকম নমুনা ও হিস্ট্রি সংগ্রহ করছেন।
দুই বোনের মধ্যে ছোট মারিশা গত বুধবার বিকেলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। বড় বোন মাসিয়ার মৃত্যু হয় গত শনিবার। হঠাৎ দুই মেয়ের মৃত্যুর পর মা-বাবাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই শিশুর মৃত্যু নিপাহ ভাইরাসে, না অন্য কোনো অজানা ভাইরাসে হয়েছে, তা নিশ্চিত করে চিকিৎসকেরা বলতে পারছিলেন না। এরপর তাদের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। নমুনা পরীক্ষার পর গতকাল আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেছেন, ওই দুই শিশুর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তারা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল না।
মারা যাওয়া শিশুদের বাবার নাম মঞ্জুর হোসেন (৩৫) ও মায়ের নাম পলি খাতুন (৩০)। তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। মঞ্জুর হোসেন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক। পরিবার নিয়ে তিনি ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই দম্পতির পাশে আছেন তাঁদের স্বজন রইস উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শিশু দুটির মা–বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা খুঁটিনাটি সবকিছু জানতে চেয়েছেন। কখন, কীভাবে, কী হয়েছিল। গায়ে কী রকম দাগ দেখা গেছে। তাঁরা ক্যাডেট কলেজেও যাবেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুই শিশু গৃহকর্মীর এনে দেওয়া বরই খেয়েছিল। গাছতলা থেকে কুড়িয়ে বরই এনে দিয়েছিলেন গৃহকর্মী। এরপর বুধবার সকালে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। বিকেলে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মাইক্রোবাসে সে মারা যায়। মৃত্যুর পর মা-বাবা লক্ষ করেন, মারিশার গায়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ উঠেছে। ওই দিন রাতেই তাকে দাফন করা হয়। এরপর শুক্রবার বড় মেয়ে মাসিয়ার একই লক্ষণসহ জ্বর আসে। সে-ও ছোট বোনের মতো বমি করছিল আর ঘন ঘন পানি খাচ্ছিল। লক্ষণ বুঝতে পেরে মা-বাবা দেরি করেননি। রাজশাহীর সিএমএইচে ভর্তি করেন। ওই দিনই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরের দিন শনিবার বিকেলে একইভাবে সে–ও মারা যায়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, দুই মেয়ে বরই খেয়েছিল। তিনি তাদের বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বরইগুলো ধুয়ে দেওয়া হয়েছিল কি না। তাদের বাবা বলেন, গৃহকর্মী গাছতলা থেকে কুড়িয়ে এনে দিয়েছিলেন, ধোয়া হয়নি।