৫ দফা দাবিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন। বেলা একটা পর্যন্ত তাঁরা সড়কে ছিলেন। এতে রাজশাহীর অন্যতম প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এর আগে শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টার দিকে রুয়েটে শহীদ মিনারে জড়ো হন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেন, দাবিগুলো না মানা পর্যন্ত তাঁরা সড়ক অবরোধ করবেন। পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সড়কটিতে যান। এদিন ক্লাস-পরীক্ষাও বর্জন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ১৬ ডিসেম্বর রাতে নগরের পদ্মা আবাসিক এলাকার পাশে হজোর মোড়ে দুই দফা হামলার শিকার হন রুয়েট শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। ওই হামলায় তিন শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সেদিন রাতেই রুয়েটের উপপরিচালক (সিকিউরিটি) জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা করেন। মামলাটিকে ওই রাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে দুই দিন পর জামিনে ছাড়া পান তাঁরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রকি ও শুভ নামের দুই রুয়েট শিক্ষার্থী কেনাকাটার জন্য হজোর মোড় এলাকায় যান। কেনাকাটার একপর্যায়ে টাকা ভাংতি করা নিয়ে দোকানদারের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান তাঁরা। কথা–কাটাকাটির মধ্যে দোকানদার তাঁদের (শিক্ষার্থীদের) গায়ে হাত তোলেন। শুভর মাথায় স্থানীয় এক ব্যক্তি বাঁশ দিয়ে আঘাত করেন। এ ছাড়া রকিকেও মারধর করা হয়। পরে তাঁরা ব্যাচের অন্য বন্ধুদের মুঠোফোনে খবর পাঠান। পরে ঘটনাস্থলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকেরাও উপস্থিত হন। গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেখানে বাজারের বণিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর আরেক দফায় হামলা করা হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
অবরোধকালে শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের গায়ে তুচ্ছ কারণে হাত তোলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের অত্যাচার বেড়ে যাচ্ছে। অথচ দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো দাবি মেনে নেয়নি। পুলিশ প্রশাসনও কোনো ভূমিকা পালন করছে না। এতে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সোনালী বলেন, কোন শক্তির জোরে এমন একটি ঘটনায় জড়িত আসামিরা ছাড়া পান—এটা শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন। তাঁরা এর শেষ দেখতে চান। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আশ্বাস ও পুলিশের কোনো কার্যক্রম না দেখতে পান, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে, হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে দ্রুততম সময়ে কঠোর শাস্তি ও ধৃত আসামিদের রিমান্ডের বদলে জামিন ও অন্য আসামিদের ধরতে না পারার বিষয়ে সুস্পষ্ট জবাবদিহি নিশ্চিত; রাজশাহীর আবাসিক এলাকাগুলো অস্ত্র, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত রাখা ও অক্ট্রয় মোড়, মোন্নাফের মোড়সহ রুয়েটের আশপাশে উপযুক্ত সমস্যার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ; রুয়েট ও এর আশপাশের এলাকাগুলো চুরি ও ছিনতাইমুক্ত করা, দোষীদের বিচার এবং হারানো মালামাল জব্দের ব্যবস্থা; রুয়েটবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত টহল নিশ্চিত এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তালাইমারী মোড়ে পুলিশ বক্সের ব্যবস্থা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলাম সরকার বলেন, তাঁরা বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করতে চান। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন।
মামলার বিষয়ে নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ঘটনার পর তাঁরা মামলা নিয়েছেন। দুজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। পরে এজাহারভুক্ত আসামিরা জামিন নেন।