কানসাট আমের বাজার ফিরছে আগের রূপে, নগদ লেনদেন কম
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আমের বাজারে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল, তা দূর হচ্ছে। আগের রূপে ফিরতে শুরু করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট আমের বাজার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বাজারে গিয়ে দেখা যায় আমের ব্যাপারী, শ্রমিক ও ক্রেতাদের আনাগোনা। তবে বাজারে আগের মতো নগদ টাকায় লেনদেন কম হচ্ছে।
গতকাল দুপুরে কানসাট আমের বাজারে ঢোকার আগে শিবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কে আমবোঝাই ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ভটভটির দীর্ঘ যানজট চোখে পড়ে। চারদিকে শুধু আম আর আম। ফজলি, আম্রপালি, বারি-৪, আশ্বিনাসহ নানা জাতের আমের সমারোহ। ক্রেতা-বিক্রেতার দর-কষাকষির মাধ্যমে মুখর বাজার।
বাজারে ঢুকতেই পুরোনো আমচাষি রায়হান আলীর (৫৩) সঙ্গে দেখা। তিনি নিজের বাগানের আশ্বিনা জাতের আম ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে বাজার থেকে বের হচ্ছিলেন। রায়হান বলেন, আন্দোলনের আগে যে দরে আম বিক্রি হচ্ছিল, আজ (গতকাল) সেই দরেই আম বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এ সময় আম বিক্রি হওয়ার কথা আরও বেশি দামে। তবু আমচাষিরা খুশি যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখন বড় সমস্যা হচ্ছে, ব্যাপারীদের কাছ থেকে নগদ টাকা পাচ্ছেন খুবই কম। তাঁরাও ব্যাংক থেকে চাহিদামতো টাকা পাচ্ছেন না। ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা চেয়ে পাচ্ছেন ৫০ হাজার। ফলে বাকিতে আম বিক্রি করে টাকা পাওয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে চাষিদের।
বাজারে ফজলি আম বিক্রি করতে আসা সোনামসজিদ এলাকার আমচাষি বারিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, আমের দাম চেয়েছেন ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ। বাজারে ফজলি আম বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার টাকা মণ। এক সপ্তাহ আগেই এ দরে আম বিক্রি হচ্ছিল। এই আম এখন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হওয়ার কথা। কারণ, এবার অনেক কম ফলন হয়েছে। আর ফজলি আমের মৌসুমও শেষের দিকে।
বাজারে আম কেনার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন সততা বাণিজ্যালয়ের মালিক ও আড়তদার খবির মিয়া। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার কারণে আড়তদার, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম শ্রমিক, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাজার আবার আগের অবস্থায় ফিরেছে। তবে ব্যাংকে লেনদেনের সমস্যা আছে। তাঁরা ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত নগদ টাকা পাচ্ছেন না। ফলে আমচাষিদেরও দিতে পারছেন না। এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার।
কানসাট আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, কানসাট আমের বাজারে প্রতিদিন ২৫-২৬ কোটি টাকার আম বিক্রি হতো। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে তা নেমে আসে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকায়। ভয়ে কেউ ট্রাক ভাড়া দিতে চাচ্ছিলেন না। কানসাটে প্রায় ৫০০ আড়তে আম কেনাবেচা হয়। কাজ করেন হাজারো শ্রমিক। এখন সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ব্যাংকের সমস্যার কারণে নগদ টাকায় লেনদেন হচ্ছে না। আড়তদারদের পাওনা পড়ে থাকছে ব্যাপারীদের কাছে। আর আমচাষিদের পাওনা পড়ে আছে আড়তদারদের কাছে। কাঁচামালের ব্যাপার, বিক্রি না করেও উপায় নেই। শেষে ব্যাপারীদের কাছে টাকা ধরা খেতে হবে কি না, এই দুশ্চিন্তা আছে।