লুটপাটের অভিযোগে বাউফলে বিএনপির নেতাকে বহিষ্কার, আনন্দ মিছিল
হামলা, ভাঙচুর, হুমকি ও লুটপাটের অভিযোগে পটুয়াখালীর বাউফল পৌর বিএনপির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবিরকে বহিষ্কার করেছে জেলা বিএনপি। এ খবরে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাউফল পৌর শহরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
আজ বরিশাল বিভাগের বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জেলা বিএনপির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে (হুমায়ুন কবির) বহিষ্কার করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রশিদ ও সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাউফল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, লুটপাট ও হুমকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট মো. হুমায়ুন কবিরের কাছে লিখিত ও সরাসরি জবাব চাওয়া হয়। তিনি যে জবাব দিয়েছেন, তা জেলা বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ জন্য মো. হুমায়ুন কবিরকে বাউফল পৌর বিএনপির সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাউফল পৌর বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. শাহজাহান হাওলাদার ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে দল পরিচালনার জন্য নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন।
গত সোমবার থেকে গতকাল পর্যন্ত বাউফল উপজেলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়েছে। হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রেহাই পাননি সাংবাদিকেরাও। আওয়ামী লীগের দুটি কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হকের বাসভবনে, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম ফারুকের বাসভবনে, বাউফল সরকারি কলেজের প্রভাষক মো. রফিকুল ইসলামের বাসভবনে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারের বাসভবন ও দোকানপাটে এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. মিয়া খানের বাসভবনসহ কমপক্ষে ২০টি ঘরে। লুট করা হয়েছে অর্ধশতাধিক মহিষ ও কয়েকটি মোটরসাইকেল। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আরও অন্তত পাঁচটি মোটরসাইকেল। ভাঙচুর ও তালা দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। টাকার বিনিময়ে আবার খুলেও দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে বাউফল পৌরসভা ভবনের আসবাব। হামলা চালানো হয়েছে কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি এমরান হাসানের বাসভবনে এবং তাঁকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিনিধিকেও এলাকাছাড়া করাসহ মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্তত ১০টি ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল আলম তালুকদার, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আপেল ফিরোজ এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল ইসলাম পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।