রাজশাহীতে দুর্ঘটনার পর সড়কের পাশের বিদ্যালয় সরানোর দাবিতে বিক্ষোভ
বিদ্যালয়ের মাঠ অধিগ্রহণ করে রাস্তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এখন বিদ্যালয় থেকে নিচে পা দিলেই সড়ক। নগরের ব্যস্ততম এই সড়কে গাড়িচাপায় দুই বছর আগে বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মারা গেছে। আজ রোববার একইভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আরেক শিশু গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এই দুর্ঘটনার পর এলাকাবাসী মাঠবিহীন এ বিদ্যালয় সরানোর দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন। আর শিশুরা নিরাপত্তার দাবিতে রাস্তায় দাঁড়ায়। অফিসকক্ষে শিক্ষকদের তালা দিয়ে রাখা হয়। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশের হস্তক্ষেপে এলাকাবাসী অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
রাজশাহী নগরের রানিনগর এলাকায় অবস্থিত এ বিদ্যালয়ের নাম খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে ১২০ জন শিক্ষার্থী ও ৬ শিক্ষক রয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীর নাম জান্নাতুল ফেরদৌস। ২০২২ সালে একইভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে জাহিদুল ইসলাম নামের প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মারা যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামিলা তারিন বলেন, প্রতিদিন শিক্ষকেরা বাচ্চাদের হাত ধরে রাস্তা পার করে দেন। একইভাবে আজও তাঁরা বাচ্চাদের পার করে দেওয়ার জন্য নামছিলেন। এমন সময় জান্নাতুল ফেরদৌস একাই দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হতে যায়। প্রথম লেন পার হয়ে দ্বিতীয় লেনে নামতেই নাটোর থেকে রাজশাহী শহরগামী একটি প্রাইভেট কার শিশুটিকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে শিক্ষকেরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ শিক্ষা বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাও হাসপাতালে শিশুটির কাছে যান।
এ দুর্ঘটনার খবর পেয়েই এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করেন। সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা বাঁশ দিয়ে ঘিরে তাঁরা যান চলাচল বন্ধ করে দেন। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের পাশের রাস্তায় বিভিন্ন দাবি লেখা ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে যায়। ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করি’, ‘অধিকারের জন্য লড়াই করি’, ‘অতিসত্বর স্পিডব্রেকার চাই’, ‘সকলে মিলে হাত মেলাই নিরাপত্তা নিশ্চিত চাই’, ‘সরকারের উচিত জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা’ ইত্যাদি। বেলা সোয়া তিনটা পর্যন্ত তাঁরা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলেন। তাঁরা এ সময় বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
রবিউল ইসলাম নামের এক মোটরসাইকেলচালক জানান, এর আগে অটোরিকশায় চাপা পড়েছিল জাহিদুল ইসলাম নামের এক শিশু। তিনি তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর হাতের ওপরেই শিশুটি মারা যায়। তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে রাস্তার ওপর স্কুল চলতে পারে না। বিদ্যালয়টির মাঠ থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। এই বিদ্যালয় এখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। চোখের ওপর এভাবে আমরা বাচ্চাদের মৃত্যু দেখতে পারব না।’
স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ রানা বলেন, এই বিদ্যালয়ের একেবারে পেছনেই খাদিমুল ইসলাম বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ রয়েছে। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে। আবার এই বিদ্যালয়ে কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরেই খড়বোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে বিদ্যালয়টি সরিয়ে নিলে এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কোনোই ক্ষতি হবে না।
বোয়ালিয়া থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আহত মেয়েটি এখন ভালো আছে। তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। আগামীকাল বেলা দুইটায় রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এখন সমস্যা হলো স্কুলটা একেবারেই রাস্তার ওপর। যখন সিটি করপোরেশন জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়, তখনই বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। এখন চাইলেই স্কুল সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’