বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর নেতা-কর্মীরা নিরাশ হয়েছেন। বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা চুপচাপ আছেন, কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন না।
দলীয় সূত্র জানায়, সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন না পাওয়ার খবরটি তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীদের অবাক করেছে। রাজনীতিতে সক্রিয় না হওয়ায় তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে পারেন, এটা সাদিক সমর্থকদের ধারণার বাইরে ছিল।
আবুল খায়ের আবদুল্লাহর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার খবর বরিশালে পৌঁছালে গতকাল নগরে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে বিষয়টি বেশ আলোচিত ছিল। অনেকেই এটাকে বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং নগরে গত পাঁচ বছরের উন্নয়ন স্থবিরতার ক্ষেত্র ইতিবাচক ঘটনা মনে করছেন। গতকাল রাতে নগরের অন্তত ছয়জন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভোটারের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁরা মনে করেন, গত পাঁচ বছরে বরিশাল শহরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ছিল স্থবির। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মনোনয়ন পাওয়ায় সেই স্থবিরতা কাটবে বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে আবার দুজনের প্রত্যাশা, আবুল খায়ের আবদুল্লাহ প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন।
বরিশালে রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন এমন ব্যক্তিরাও অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম এমন প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি যত দূর জেনেছি আবুল খায়ের আবদুল্লাহ একজন পরিশীলিত ব্যক্তি। মানুষকে সম্মান করেন এবং মেয়র হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো গুণাবলি তাঁর মধ্যে আছে। তা ছাড়া বরিশালের রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন আনতে তিনি সক্ষম হবেন বলে আমরা মনে করি। সবকিছু মিলিয়ে ওনার প্রতি নগরবাসীর প্রত্যাশাটা অনেক বেশি। এ জন্য তাঁকে সেসব প্রত্যাশার দিকে নজর দিতে হবে। আমি মনে করি, তিনি দিন বদলের সূচনা করবেন তাঁর দায়িত্বশীলতার মধ্য দিয়ে।’
মনোনয়ন ঘোষণার পর প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। উন্নত ও আধুনিক নগর গড়তে চাই। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই।’
বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এখানে বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহকে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। কিন্তু সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন পাননি। এখন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হবে, সেটা নিয়ে ভোটারদের কৌতূহল ও আলোচনা দুটিই আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে জাতীয় কমিটির সদস্য গোলাম আব্বাস চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছিলাম এটা ঠিক। কিন্তু নেত্রী ও মনোনয়ন বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটার বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। অবশ্যই আমরা নেত্রীর সিদ্ধান্তকে সম্মান করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ একজন মার্জিত ও ভদ্র মানুষ।’
এদিকে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মনোনয়ন পাওয়ার পর বরিশালে দলীয়ভাবে কোনো মিছিল হয়নি। মহানগর ও জেলার নেতারাও চুপচাপ আছেন। কোথাও প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না। আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে সিটি করপোরেশনে সাদিক আবদুল্লাহ বিরোধী ১০ জন কাউন্সিলর গতকাল দিনভর শুভেচ্ছা মিছিল করেছেন। এ ছাড়া বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থকেরা আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে মিছিল করেছেন নগরের বিভিন্ন এলাকায়।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেত্রী যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর পক্ষেই কাজ করব।’