চার দিনেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদের খোঁজ মেলেনি। তাঁর অনুপস্থিতে স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীন নির্বাচনী কাজ চালিয়ে গেলেও এজেন্ট–সংকটে পরেছেন। কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলছেন, এই ভয়ে কেউ এজেন্ট হতে সাহস করছেন না।
আবু আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা ও পাঁচবারের সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবু আসিফ। তাঁর নিখোঁজে নির্বাচনে সাত্তারের বিজয়ের পথ একেবারেই পরিষ্কার হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিখোঁজ হন আবু আসিফ আহমেদ। মুঠোফোন বাসায় চার্জারে রেখে বের হন তিনি। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না পরিবারের লোকজন। এর আগে গত বুধবার নিখোঁজ হন আবু আসিফের নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী ও তাঁর শ্যালক শাফায়াত সুমন (৩৮)। তিনি আশুগঞ্জের লালপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মেহেরুননিছা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী চার দিন ধরে নিখোঁজ। আমার অবস্থা কেমন হবে একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। কোনো কিছু ভেবে উঠতে পারছি না। কী করব, কীভাবে করব, বুঝতে পারছি না। স্বামী ফিরে আসবে—এ অপেক্ষা করছি। ইসি (নির্বাচন কমিশন) তো আমার স্বামীর খোঁজ করার জন্য প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কর্মকর্তাকে বলেছে। ভোটের আগেই স্বামীর ফিরবে—এ আশায় আছি।’
বাসার চারপাশে সাদাপোশাক পরা লোকজন ঘোরাফেরা করছে উল্লেখ করে মেহেরুননিছা বলেন, তারা ছবি তুলছে, ভিডিও করছে। তারা কারা, তা এখনো শনাক্ত করতে পারেননি। তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখানো হচ্ছে। ভয়ে কেউ এজেন্ট হতে চাইছে না। কয়েক দিন আগেও চারজন মেয়ে এজেন্ট হতে চেয়েছিলেন। এখন তাঁরা এজেন্ট হতে চাইছেন না। উল্টো মাফ চাইছেন। শেষ পর্যন্ত মনে হচ্ছে, কোনো কেন্দ্রেই তিনি এজেন্ট দিতে পারবেন না।
মেহেরুননিছা বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম আমার স্বামী সোমবারের মধ্যে ফিরে আসবে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে ফিরে না এলে আমি লিখিত অভিযোগ করব। আতঙ্ক ও ভয়ে বাসা থেকে বরে হতে না পারার কারণে লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবু আসিফের সমর্থক সরাইল উপজেলার এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কর্মী-সমর্থকদের এজেন্ট হতে অনুরোধ করছেন। কিন্তু ভয়ে কেউ এজেন্ট হতে রাজি হচ্ছেন না।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গণমাধ্যম থেকে আবু আসিফের বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তাঁরা সম্ভাব্য সব জায়গায় তাঁকে খোঁজার চেষ্টা করছেন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ করেনি।
জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন কমিশন তাঁদের কাছে একটি প্রতিবেদন চেয়েছে। তার উত্তর দেওয়া হয়েছে। আবু আসিফের পরিবারের লোকজন কোনো অভিযোগই করেননি।
সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে কাল ১ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৯ জন। সরাইল উপজেলায় ৮৪টি এবং আশুগঞ্জ উপজেলায় ৪৮টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে।
এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির দলছুট নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া (কলার ছড়া), আবু আসিফ আহমেদ (মোটরগাড়ি), জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানি (লাঙ্গল) ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল)।