‘গুলি খেয়ে নিরপরাধ বাচ্চাটা মারা যাবে, কোনো দিনও ভাবিনি’

মো. আহাদুন

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জু্লাই বৃহস্পতিবার রাতে পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বৈঠাখালীর বাসায় বসে খাওয়াদাওয়া করেছিল স্কুলছাত্র মো. আহাদুন (১৭)। কিছুক্ষণ পর বাইরে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির দুদিন পর গত ২০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের স্টোর রুমে তার লাশের সন্ধান পায়।

আহাদুন নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে। মজিবুর প্রায় এক যুগ ধরে ঢাকার মেরুল বাড্ডা এলাকায় স্ত্রী ও চার ছেলে নিয়ে থাকেন। সেখানে ডিজেল ইঞ্জিন মেরামতের কাজের পাশাপাশি একটি মুদিদোকান চালান তিনি। চার ছেলের মধ্যে তৃতীয়জন আহাদুন পূর্ব বাড্ডার ইউসেপ হাজী সিকান্দার আলী টেকনিক্যাল স্কুল থেকে ‘জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্ক’ বিষয়ে এবার এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে তাঁর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের মুদিদোকান দেখাশোনা করত সে।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আহাদুনের গ্রামের বাড়িতে গেলে তার চাচা আবুল হোসেন বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আহাদুনের লাশ শনাক্ত করে তাঁর বাবা মজিবুর রহমান। আহাদুনের লাশে দুটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। একটি কানের এক পাশে ঢুকে অপর কানের পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। আরেকটি গুলি লাগে পায়ে।

আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার ভাতিজা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। লেখাপাড়ার পাশাপাশি সে তার বাবার মুদিদোকান চালাত। এভাবে গুলি খেয়ে নিরপরাধ বাচ্চাটা মারা যাবে, কোনো দিনও ভাবিনি। এই মৃত্যুর বিচার আমরা কার কাছে চাইব বলেন? সব আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিলাম।’

আহাদুনের বাবা মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি নিজে ডিজেল ইঞ্জিন মেরামতের কাজ করি। বাসার পাশেই একটি মুদিদোকান দিয়েছি। আহাদুন স্কুল থেকে এসে দোকানে বসত। তার অন্য ভাইয়েরাও পালা করে দোকানটা চালাত। সময় পেলে মাঝেমধ্যে আমিও বসতাম দোকানে। ১৯ জুলাই রাতে টিভিতে খবর দেখি, ঢাকা মেডিকেলে দুটি অজ্ঞাত লাশ আছে। পরের দিন অনেক চেষ্টার পর জরুরি বিভাগের স্টোর রুমে গিয়ে ২০ থেকে ২৫টি অজ্ঞাত লাশ দেখতে পাই। সেখানে আহাদুনের লাশও ছিল। বাবা হয়ে ছেলের লাশ কাঁধে নেওয়া যে কী কষ্ট, এটা বোঝাতে পারব না ভাই। আল্লাহ এর আগে আমারে মৃত্যু দিল না কেরে!’

নিহত আহাদুনের ছোট চাচা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাতিজারে যারা গুলি করে মারল, তাদের যেন বিচার হয়। ভাতিজার লাশটা হিমঘরে রাখা হয়নি, রাখা হয়েছিল একটা সাধারণ রুমে। ফলে লাশ গলে নরম হয়ে গিয়েছিল।’

কৈলাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, আহাদুন ছেলেটি নরম স্বভাবের ছিল। মাঝেমধ্যে এলাকায় আসত। তার বাবা-চাচারা এলাকায় নিরীহ মানুষ হিসেবে পরিচিত।