ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচন
জামালের প্রার্থিতা ঘোষণা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে শাহদাব
১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী মারা গেলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। ৫ নভেম্বর এ আসনে ভোট হবে।
ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে শাহদাব আকবর ওরফে লাবু চৌধুরীর (৬১) জন্য লড়াইটা সহজ হবে না। এ ক্ষেত্রে শাহদাবের সঙ্গে তাঁর বড় ভাই আয়মন আকবর ওরফে বাবলুর বিরোধ মনে করা হচ্ছিল প্রধান চ্যালেঞ্জ। এবার এ উপনির্বাচনে নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া (৪৪) ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যা শাহদাবকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলবে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কেউ কেউ মনে করছেন। তবে এ বিষয়ে শাহদাব আকবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতটা গর্জন, ততটা বর্ষণ হবে না।’
এ উপনির্বাচনে যে ১৭ জন নেতা-কর্মী দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে জামাল হোসেন মিয়া একজন। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজ বাড়িতে সমর্থকদের সঙ্গে এক সভা শেষে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা এবং সদরপুরের কৃষ্ণপুর উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-২ আসন। এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী। গত ১১ সেপ্টেম্বর তিনি মারা গেলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৫ নভেম্বর এই আসনে ভোট হবে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তাঁরা মনে করছেন জামাল হোসেন মিয়া প্রার্থিতা ঘোষণা করায় এখন আয়মন আকবরের সমর্থকেরা তাঁর পক্ষে কাজ করবেন। এতে শাহদাব আকবরকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। আবার সাজেদা চৌধুরীর দুই ছেলের কর্মকাণ্ডে দুই উপজেলার অনেক নেতা–কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাঁরাও জামাল হোসেনের পক্ষ নিতে পারেন। প্রকারান্তরে যা শাহদাব আকবরের বিরুদ্ধে যেতে পারে।
এমনটি মনে করেন না সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাজেদা চৌধুরী আমাদের এলাকার কিংবদন্তি নেতা। তাঁরই প্রতিনিধি শাহদাব। জনগণ তাঁর মধ্যে নেত্রীর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন। নৌকা প্রতীকের কারণে নির্বাচনে অন্য কারও অবস্থান ধোপে টিকবে না।’
আওয়ামী লীগের স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সাজেদা চৌধুরী সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পাওয়ার পর জামাল হোসেন মিয়া তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) হন। ২০১১ সালে জামালের জায়গায় পিও হন ভাঙ্গা উপজেলার শাহদাৎ হোসেন। ২০১৩ সালে জামাল হোসেনকে তাঁর এপিএস করা হয়। পরে মায়ের সহযোগী হিসেবে এলাকার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন সাজেদার বড় ছেলে আয়মন আকবর।
এরপর আয়মনের সঙ্গে জামালের বিরোধ দেখা দেয়। ২০১৬ সালে জামাল হোসেনকে বাদ দিয়ে আয়মন আকবরকে সাজেদা চৌধুরীর এপিএসের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে এটি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০১৮ সালের দিকে কাজী শফিউদ্দিন চৌধুরী আবার এপিএস হন। এরপর মায়ের সহযোগী হিসেবে আয়মন আকবরের স্থলে ছোট ছেলে শাহদাব আকবরের আবির্ভাব ঘটে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, এ দুই সুপারিশের কোনোটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানায়নি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
উপনির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জামাল হোসেন মিয়া বলেন, ‘দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমার কোনো খেদ নেই। তবে আমি শাহদাব আকবর চৌধুরীর দ্বারা নির্যাতিত। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পরামর্শে ও নিজের সিদ্ধান্তে নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
জামাল হোসেনের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শাহদাব আকবর বলেন, যে কেউ নির্বাচন করতে পারেন। তিনি দলীয় কোনো ব্যক্তি হলে দল সেটি দেখবে। আর তাঁর (জামাল) প্রভাব শুধু তালমা ইউনিয়নেই সীমাবদ্ধ।