শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে আর কর্মসূচি দেবে না রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ

রাজশাহী নগরের কুমারপাড়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে আর কর্মসূচি পালন না করার ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ। সংগঠনের অনুমতি ছাড়া কাউকে আর কোনো কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তাঁদের শান্ত হতে বলেছেন। তিনি বিষয়টি দেখবেন। আজ সোমবার দুপুরে নগরের কুমারপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সহসভাপতি তবিবুর রহমান শেখ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, তাঁরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছেন, রাজশাহী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ধ্বংস করার জন্য একদল লোক কাজ করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও বাংলাদেশের জনকল্যাণে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের অবদানকে খাটো করতে এবং শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে গণধিক্কৃত, জনবিচ্ছিন্ন, সুযোগসন্ধানী হিসেবে আখ্যায়িত কতিপয় ব্যক্তি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা সব সময় খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে কুৎসা রটনায় লিপ্ত। তারা অপকর্মের দ্বারা খায়রুজ্জামান লিটনের রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা, খায়রুজ্জামান লিটনের অবস্থান দল ও জনগণের হৃদয়ের মণিকোঠায়।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ‘বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল (আশরাফুল ইসলাম) দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কর্মী। ছাত্রলীগের কর্মী থেকে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুলের সঙ্গে খায়রুজ্জামান লিটনের রাজনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তিনি আহত হওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেন খায়রুজ্জামান। নিহত ব্যক্তির সন্তানদের অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়ে পাশে দাঁড়ান। বাবুল আহত হওয়ার পর থানায় মামলা করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্রকারী শাহরিয়ার আলম খায়রুজ্জামান লিটনসহ অন্যদের আসামি করে নতুন হত্যা মামলার ঘোষণা দেন। ষড়যন্ত্রকারী শাহরিয়ার আলমের এই ঘোষণায় আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও জনগণের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়েছে, ‘উচ্চাভিলাষী শাহরিয়ার আলম আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী, দলের শৃঙ্খলাবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও জনসাধারণকে শান্ত থাকার জন্য, ধৈর্য ধারণ করার জন্য ও কোনো প্রকার উসকানি বা প্ররোচনায় কান না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শাহরিয়ার আলম গংদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

আরও পড়ুন
আজকের সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাইকে শান্ত হওয়ার জন্য আহ্বান। আমরা এ মুহূর্তে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি না। আমাদের দলের নেত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু সমাধান, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি—সবকিছুই দাবি করছি।
আসলাম সরকার, রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসলাম সরকার বলেন, ‘আজকের সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাইকে শান্ত হওয়ার জন্য আহ্বান। আমরা এ মুহূর্তে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি না। আমাদের দলের নেত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু সমাধান, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি—সবকিছুই দাবি করছি। বাবুল হত্যায় যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, দেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আমাদের শান্ত হতে বলেছেন। তিনি বিষয়টা দেখবেন।’

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার আশরাফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ‘মদদদাতা’ হিসেবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেন শাহরিয়ার আলম; যদিও খায়রুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা শাহরিয়ার আলমকেই দায়ী করেছেন।
দলিল লেখক সমিতির কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২২ জুন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা চত্বরের ভেতর থেকে আশরাফুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার বিকেল মারা যান আশরাফুল।

ওই সংঘর্ষের পরদিন দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পরে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী আদালতে আরেকটি মামলা করে অপর পক্ষ। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় পাকুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলামসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।