‘আমরা ভাত চাইনে, তিরান চাইনে; চাই একটা ভালো বাঁধ’
অসীম কুমার ঘোষের বাড়ির খুব কাছ দিয়ে বয়ে চলেছে ভদ্রা নদী। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালীনগর এলাকায় তাঁর বাড়িটির অবস্থান। গত ২২ আগস্ট দুপুরের দিকে নদীভাঙনের কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্লাবিত হয় কয়েকটি গ্রাম। লোনাপানির তোড়ে ভেসে যায় তাঁর মাছের ঘেরও। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এ পানিতে সপরিবার আটকে ছিলেন অসীম। শুধু তাঁরাই নন, পানিবন্দী হয়ে পড়েন গ্রামটির আরও প্রায় ১৩ হাজার বাসিন্দা।
আক্ষেপ নিয়ে অসীম বলছিলেন, ‘আমরা ভাত চাইনে, তিরান (ত্রাণ) চাইনে। আমরা চাই একটা ভালো বাঁধ। ভালো বাঁধ হলি আমরা জমিতে কিছু কইরে খাতি পারবানে।’
গতকাল সোমবার বিকেলে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে এলাকারবাসীর ডাকা মানববন্ধন কর্মসূচিতে অসীম কুমারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ভাঙনকবলিত এলাকায় আয়োজিত ওই কর্মসূচি শেষ হয় সন্ধ্যার দিকে। অসীম কুমারের মতো শতাধিক ভুক্তভোগী বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন এতে। তাঁদের দাবি একটাই, টেকসই বেড়িবাঁধ চান সবাই।
দেলুটি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২২ নম্বর পোল্ডার (চারপাশে নদীবেষ্টিত বাঁধ) গঠিত। পোল্ডারের কোনো এক জায়গায় বাঁধ ভাঙলে পুরো ১৩টি গ্রামই প্লাবিত হয়।
গ্রামগুলোর বাসিন্দারা বলেন, প্রতিবার বড় ঘূর্ণিঝড়ে এলাকার বাঁধ কোথাও না কোথাও ভেঙে যায়। এতে কয়েক বছর ধরে তাঁরা একটু একটু করে যে ক্ষতি কাটিয়ে উঠছেন, সেটা আবার নিমেষেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এ কারণে কখনো গুছিয়ে ওঠা হয় না। তবে একবার টেকসই বেড়িবাঁধ হলে তাঁদের দুঃখ অনেকটাই ঘুচে যেতে পারে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময়ও ভদ্রা নদীর গোপী পাগলা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। তখনো আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁরা।
৫৭ বছর বয়সী রবিন কবিরাজ এসেছিলেন ওই মানববন্ধনে। তিনি বলেন, তাঁর ১২ বিঘা জমি ছিল। নদীভাঙনে সবই হারিয়ে গেছে। এখন নিজের মাথা গোঁজার মতো ঠাঁইটুকুও নেই। অন্যের জমিতে ছোট একটা ঘর করে বসবাস করছেন। আর সংসার চলছে দিনমজুরি করে। এর মধ্যে এমন দুর্ভোগের তাঁর নাজেহাল অবস্থা।
গতকাল মানববন্ধনের পাশাপাশি গণস্বাক্ষর কর্মসূচিও চালান গ্রামবাসী। পরে গণস্বাক্ষর নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেবেন তাঁরা। মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পলাশ রায়। তিনি বলেন, এবারের ভাঙনে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। চার শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। শত শত মানুষের ঘর ভেঙে পড়েছে। এই এলাকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস আমন ধান। দুবার বীজতলা ও রোপণ করা ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা কিনে বাসিন্দারা ধান রোপণ করেছেন। এবার ধানের উৎপাদনের খরচও অনেক বেশি পড়েছে।
পলাশ রায়ের ভাষ্য, ‘টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকলে কখনো এ এলাকার মানুষের উন্নয়ন হবে না। আমরা চাই, সরকার এই এলাকায় যেন দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়।’