বাউফলে ১৪ ঘণ্টা পরও অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা যায়নি, অন্যদের ধর্মঘট
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ব্যবসায়ী শিবানন্দ রায় বণিক ওরফে শিবু বণিককে অপহরণের ১৪ ঘণ্টা পার হলেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁকে নিয়ে চরম উত্কণ্ঠায় সময় পার করছে পরিবার। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শিবু বণিককে অপহরণের প্রতিবাদে ও তাঁকে দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে বাউফলের কালাইয়া বন্দরের পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী আজ শনিবার সকাল থেকে দোকান বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছেন।
এর আগে গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকে কালাইয়া বন্দরের মার্চেন্টপট্টি এলাকায় শিবু বণিকের দোকানের দুই কর্মচারীকে বেঁধে দোকানের পাঁচ লক্ষাধিক টাকা লুট ও এই ব্যবসায়ীকে ট্রলারে করে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। শিবু বণিক ওই বন্দরের একজন বড় ব্যবসায়ী। তিনি কয়েকটি কোম্পানির পণ্যের পরিবেশক। এ ছাড়া চাল, ডাল, আটাসহ বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি বিক্রেতা তিনি।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কালাইয়া বন্দরের মার্চেন্টপট্টি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ী শিবু বণিকের বাসভবন ও দোকান পাশাপাশি। দোকান-সংলগ্ন কালাইয়া নৌ পুলিশের স্পিডবোট রাখার ঘাট। শিবু বণিকের দোকানের কর্মচারী বলেছেন, ওই ঘাটে রাখা ট্রলারে করে তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ ও পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দোকানের সামনের সড়কে সিসিটিভি ক্যামেরাও আছে।
দোকানের কর্মচারী শংকর দাস (৩৮) বলেন, শুক্রবার দোকানের সারা দিনের হিসাব বুঝে নিয়ে দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শিবু বণিক। রাত সোয়া ১০টার দিকে ৮-১০ জনের একটি মুখোশধারী দল দোকানে ঢুকেই সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শিবু বণিক এবং কর্মচারী শংকর ও তাপসকে (৩৫)। দুর্বৃত্তদের সঙ্গে একাধিক পিস্তল ছিল। পরে তারা দোকানের ক্যাশে থাকা পাঁচ লাখের বেশি টাকা লুট করে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে শিবু বণিককে বেঁধে ট্রলারে উঠিয়ে অপহরণ করে। ঘটনার রাতে শিবু বণিকের বাসায় অন্য কোনো স্বজন ছিলেন না।
কালাইয়া বন্দরের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই তাঁরা অদূরে থাকা কালাইয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানান। কিন্তু নৌ পুলিশ তেমন কোনো তৎপরতা দেখায়নি। আর এ কারণেই দুর্বৃত্তরা নির্বিঘ্নে তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যেতে পেরেছে।
স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. নূরুল আমিন বলেন, এমন ঘটনা বাউফলে প্রথম। ১৩ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও শিবু বণিককে পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি, এটা খুবই হতাশার এবং দুঃখজনক।
শিবু বণিকের স্বজন সনজিৎ বণিক বলেন, ‘তাঁর ডায়াবেটিক ও হৃদ্রোগ আছে। সময়মতো ওষুধ না খেলে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আপনারা তাঁকে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন।’
নৌ পুলিশের তৎপরতা না দেখানোর বিষয়ে কালাইয়া নৌ পুলিশের পরিদর্শক গাজী সালাউদ্দিন বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। খবর পেয়ে ট্রলার নিয়ে বাউফল থানা-পুলিশ সদস্যদের নিয়ে তিনি অভিযানে বের হন। সারা রাত নদীতে খুঁজেছেন। কুয়াশা ও প্রচণ্ড শীতের কারণে স্পিডবোট নিয়ে অভিযান করা সম্ভব হয়নি।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে তিনি ছুটে এসেছেন। আশপাশের থানাগুলোতে ওই রাতেই এ বার্তা দেওয়া হয়েছে। রাত থেকেই পুলিশের একাধিক দলের ট্রলার নিয়ে নদীতে তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।