গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কার থাকা অবস্থায় তাঁর সঙ্গে অনেক নেতা-কর্মীর সখ্য ছিল। ওই সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান ও সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে কারণ দর্শাও (শোকজ) নোটিশ দিয়েছিলেন। কারণ দর্শাওয়ের জবাবও দিয়েছিলেন অনেকে। আসন্ন সিটি নির্বাচনে সেই সব নেতাকে মাঠে নামানো দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
চ্যালেঞ্জের কারণ খুঁজতে গিয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের অন্তত আট নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর আলমকে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের পর তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুই শতাধিক নেতাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেয় মহানগর আওয়ামী লীগ। গত বছরের ১ জুন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউল্লাহ মণ্ডল ওই কারণ দর্শাও নোটিশে স্বাক্ষর করেন। কারণ দর্শাও নোটিশপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে ১৯ জন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে বিভিন্ন পদে ছিলেন। অপর শতাধিক ব্যক্তি নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমিটিতে থাকা নেতা-কর্মী। কারণ দর্শাও পাওয়া অনেক নেতাকে দলে সক্রিয় দেখা গেলেও ক্ষোভ কাটেনি তাঁদের। এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৬১ জন সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। এই কাউন্সিলরদেরও কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এখন ওই সব কাউন্সিলরকেও নৌকার পক্ষে কাজ করানো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন নেতারা।
কারণ দর্শাও নোটিশ পাওয়া নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আগের কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রউফ, সহসভাপতি ও গাজীপুর আদালতের জিপি আমজাদ হোসেন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান এস এম মোকছেদ আলম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সিটি কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন মিয়া, সহদপ্তর সম্পাদক মাজহারুল আলম, ক্রীড়া সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান, সদস্য ও সিটি কাউন্সিলর আজিজুর রহমান, সদস্য রজব আলী, সদস্য হাজি আবদুর রশিদ, উপদেষ্টা রিয়াজ মাহমুদ আয়নাল প্রমুখ।
কারণ দর্শাও চিঠি পাওয়া গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আগের কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রউফ বলেন, ‘আমাদের শোকজ দেওয়া হলেও পরবর্তী পদক্ষেপ কী, তা এখনো জানানো হয়নি। তবে দলের কঠিন সময়ে যদি আমাদের প্রয়োজন হয়, তাহলে দল অবশ্যই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’
কারণ দর্শাও নোটিশ পাওয়া কয়েকজন নেতা বলেন, সামনে সিটি নির্বাচন, এ সময় তুচ্ছ অজুহাতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দল থেকে বাদ দেওয়া এবং দলের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হলে সেটা দলের জন্য শুভংকর কিছু হবে না। আগামী ২৫ মে সিটি নির্বাচন। এ সময় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে দলের নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সিটি কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শোকজ পাওয়া নেতাদের মধ্যে প্রায় সবাই আগের কমিটির বিভিন্ন পদে ছিলেন। এখন ওই কমিটিও নেই, আর নেতারা কোনো পদেও নেই। তাঁরা নতুন কমিটিতে পদে না থাকলেও এলাকায় দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। ওই সময় আমরা জবাব দিয়েছিলাম। সেগুলো ভুলে গিয়ে এখন দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই আমরা আছি। যেহেতু দল করি, তাই দলের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
অপরদিকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছে গত বছরের ১৯ নভেম্বর। সম্মেলনে আজমত উল্লা খানকে সভাপতি ও আতাউল্লাহ মণ্ডলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সম্মেলনের প্রায় পাঁচ মাস পার হতে চললেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এতে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এই নেতা-কর্মীদেরও আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাঠে নামানো একটি চ্যালেঞ্জ বলেও আওয়ামী লীগের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি নির্বাচনের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, ‘শোকজ নোটিশ পাওয়া কিছু নেতার শোকজ তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার কিছু নেতাকে সতর্ক করা হয়েছে। আমরা সব নেতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি। সবাই আমার সঙ্গে আছেন।’