সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১টিতেও নেই জলাতঙ্কের টিকা। বাধ্য হয়ে কুকুরে কামড়ানো রোগীদের ছুটতে হচ্ছে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে। আবার না বোঝার কারণে জেলার অনেক মানুষ সরাসরি হাসপাতালে না গিয়ে আগে কবিরাজের শরণাপন্ন হয়। এতে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন রামপদ রায় বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুরে কামড়ানো রোগীর জন্য কোনো (অ্যান্টি রেবিস) টিকার সরবরাহ নেই। কারণ, একটি অ্যাম্পল থেকে চারজন রোগীকে টিকা দেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একসঙ্গে চারজন রোগী সাধারণত হয় না। তাই শুধু সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানো রোগীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে উপজেলা পর্যায়েও জলাতঙ্ক রোগের এই টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে।
চিকিৎসকেরা বলেন, জলাতঙ্ক রেভিস ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত কুকুর রোগটির প্রধান বাহক। এ ছাড়া বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরও রোগটি ছড়াতে পারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যদি কুকুরে কামড়ানো রোগীদের টিকা দিত, তাহলে এতটা হয়রানি হতো না।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতিদিন গড়ে ২৭ জন কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আহত হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৩২ শতাংশই আবার শিশু, যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। হাসপাতালটির পরিসংখ্যানবিদ জীবন্নাহার বলেন, ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে কুকুরের কামড় খেয়ে চিকিৎসা নিয়েছিল ১০ হাজার ৬৭ জন। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ১৩৭ জনের বয়স ১৫ বছরের নিচে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কুকুরের কামড়ে আহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। কারণ, এখনো অনেক মানুষ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হলে সনাতনপদ্ধতিতে চিকিৎসা নিয়ে থাকে, হাসপাতালে যায় না। রেবিস ইন এশিয়া ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ তিনের মধ্যে।
উল্লাপাড়া সলপ ইউনিয়নের চর ঘাটিনা গ্রামের আবদুস ছালাম বলেন, ‘আমার ছোট ছেলেকে কুকুরে কামড় দিয়েছিল। সিরাজগঞ্জ সদরে গিয়ে চার দিন ইনজেকশন দিয়ে এনেছি। অনেক কষ্ট করে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা থাকলে এত কষ্ট করতে হতো না।’
বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের আদাচাকী উত্তর পাড়া গ্রামের সোহরাব আলী বলেন, তিনিও একবার কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছিলেন। হাসপাতালে যখন চারজন কুকুরে কামড়ানো রোগী একত্র হয়, তখন টিকা দেওয়া হয়। রোগী না থাকলে অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হতো।
কামারখন্দ উপজেলার হায়দারপুর গ্রামের আশিক সরকার বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যদি কুকুরে কামড়ানো রোগীদের টিকা দিত, তাহলে এতটা হয়রানি হতো না। জেলা সদরে গিয়ে জলাতঙ্কের টিকা নিতে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করে। গ্রামের প্রান্তিক মানুষকে কুকুর বা অন্য কোনো হিংস্র পশু কামড়ালে তারা শুধু কবিরাজি চিকিৎসা নিয়েই চুপ থাকে। এতে বিপদ হতে পারে।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, এটা সত্য যে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে অনেক বেশি মানুষ এখন চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসছে। এর কারণ, মানুষ এখন সচেতন হয়েছে। কুকুর মারা নিষেধ থাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যাও ব্যাপক হারে বাড়ছে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়বে।