বরিশালে জিপিএ-৫ সংবর্ধনা: ‘সফল হতে হলে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে’
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে বরিশালে গত তিন দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেও ছিল বৈরী আবহাওয়া। তাই শিক্ষার্থীদের মিলনমেলার আয়োজন নিয়ে ছিল শঙ্কা। কিন্তু আজ শুক্রবার সকালে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া। সব শঙ্কা কাটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রথম আলো।
নগরের কীর্তনখোলা নদীতীরের বান্দরোডে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সকাল ১০টায় ডিজিটাল স্ক্রিনে জাতীয় পতাকা পতপত করে উড়ছিল এবং সঙ্গে বেজে ওঠে, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...।’ এ সময় মিলনায়তনে পিনপতন নীরবতা। সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতকে সম্মান জানান। জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতার আত্মার প্রতি সম্মান জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বন্ধুসভার সভাপতি নাঈম ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন। অতিথিদের মধ্যে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন বরিশাল বিভাগীয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জগদীশ স্বারস্বত মাধ্যমিক বিদালয় অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আসাদুল আলম, বরিশাল জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ, প্রথম আলোর ফরিদপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রবীর কান্তি বালা, শিখোর প্রতিনিধি হেমায়েত উদ্দীন কাজী।
অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে আসাদুল আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা একেক জন একেকটি অনুপ্রেরণার টুকরা টুকরা গল্প। সেই টুকরা টুকরা গল্পগুলো প্রথম আলো আজ একই সূতায় গেঁথে আমাদের সামনে উপস্থাপন করছে। আজ এখানে আমরা এক আকাশ তারকারাজির সামনে কথা বলছি, যাদের জীবনের সেরা অর্জন তারা শ্রমে-ঘামের বিনিময়ে অর্জন করেছে। তোমাদের অভিনন্দন হে বিজয়ী।’
আসাদুল আলম আরও বলেন, ‘তোমাদের এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের জয়ের জন্য, মানববতার জয়ের জন্য, দেশপ্রেমের জন্য তোমাদের এই বিজয়গাথা কাজে লাগাতে হবে। দেশমাতৃকার সম্মান-মর্যাদা বৃদ্ধিতে কাজে লাগাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি প্রেরণা ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তাকে দিয়ে পৃথিবী জয় করানো সম্ভব।’
নগরের কীর্তনখোলার তীরের বান্দরোডে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আজ আয়োজন করা হয় শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ সংবর্ধনা। বিভিন্ন উপজেলা থেকে এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের জন্য এই আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে জেলার প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। অংশ নেয় অন্তত দেড় হাজার শিক্ষার্থী।
আজ সকাল আটটা থেকে কৃতী শিক্ষার্থীরা শিল্পকলা প্রাঙ্গণে আসতে থাকে। অনেকের সঙ্গে বাবা মা ও স্বজনেরাও আসেন। শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থলে এসে নির্দিষ্ট বুথের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেস্ট ও স্ন্যাকস ব্যাগ সংগ্রহ করে। কেউ কেউ ফটোফ্রেমের ভেতর দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবি তোলে। সকাল ১০টার দিকে মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের অতিথি সাজ্জাদ পারভেজ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা শুধু মেধাবী মুখ নও, আগামীর বাংলাদেশ। সফল হতে হলে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে। ভালো মানুষ হতে হবে। মানবিক মানুষ হতে হবে। এসএসসির এই সাফল্য এইচএসসিতেও ধরে রাখতে হবে। বেশি করে পড়াশোনা করতে হবে, সাফল্য অর্জনের জন্য বেশি করে সাধনা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে ‘না’ বলার অঙ্গীকার করান শিখোর প্রতিনিধি হেমায়েত উদ্দীন কাজী। তিনি এই আয়োজনকে সফল মেধাবীদের উৎসব উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি অভিভূত বরিশালের এই আয়োজনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ দেখে।’
অনুষ্ঠানের শেষের আয়োজন ছিল জনপ্রিয় তরুণ শিল্পী মিঠুন রয় ও তাঁর দলের জমজমাট গান। মিথুনের কণ্ঠে যখন ভেসে আসে, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি...’, তখন শিক্ষার্থীও তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মেলায়। আর কোরাসের মূচ্ছর্না মিলনায়তন ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বাইরে।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগান নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলায় জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।