মুন্সিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিএনপির এক কর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক ২ সংসদ সদস্যসহ ১৪২ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর আহত মঞ্জিল মোল্লা (৫৩) বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। আজ শুক্রবার সকাল আটটার দিকে এটি মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খলিলুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে জানান, আহত মঞ্জিল মোল্লা মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সালসহ ১৪২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন।
বাদী মঞ্জিল মোল্লা মুন্সিগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার ইব্রাহীম মোল্লার ছেলে। তিনি পেশায় দিনমজুর ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় তিনটি হত্যা, দুটি হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মামলা হয়েছে।
নতুন এই মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আনিসুর রহমান ওরফে রিয়াদ, মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান, মুন্সিগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভূঁইয়া, সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফয়সাল মৃধা, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সুরুজ, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নসিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত হোসেন প্রমুখ।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উত্তর ইসলামপুরের বিএনপির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে ছাত্র-জনতা শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের পেটাতে শুরু করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার সড়ক দিয়ে সুপারমার্কেট এলাকায় আসতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফয়সাল মৃধা, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নসিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাগরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ। গুলিতে উত্তর ইসলামপুরের রিয়াজুল ফরাজী, সজল মোল্লা ও নুর মোহাম্মদ মারা যান। এতে দেড় শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন। এ দিন মঞ্জিল মোল্লার পেটে, পিঠে ও হাতে তিনটি গুলি লাগে। ঘটনার পর থেকে আড়াই মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মঞ্জিল। এখনো তাঁর চিকিৎসা চলছে।