রংপুরের বদরগঞ্জ
গরুর খুরারোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা
গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খুরারোগে দুই শতাধিক গরু মারা গেছে। চাহিদা অনুযায়ী টিকা নেই।
রংপুরের বদরগঞ্জে খুরারোগের প্রকোপ বেড়েছে। গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এই রোগে দুই শতাধিক গরু মারা গেছে।
এর আগে ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৭ জুন থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষক ও খামারিদের পাঁচ শতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে একের পর এক গরু মারা গেলেও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে প্রতিষেধক ওষুধ মিলছে না বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আজমল হুদা বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।’
খুরারোগে আক্রান্ত গরুর জ্বর আসে, মুখে ও পায়ে ঘা হয়। পরে খাওয়া ছেড়ে দুর্বল হয়ে গরু মারা যায়। কৃষক ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ওসমানপুর গ্রামের খামারি ওবায়দুল হকের সাতটি, নুর মোহাম্মদের ৩টি, দামোদরপুর ইউনিয়নের আমরুলবাড়ি গ্রামের সাইদুল হকের ৩টি, মোস্তফাপুর গ্রামের আবদুল হামিদের ৩টি, ওবায়দুল হক, শরিফুল ইসলাম ও মাহমুদ হোসেনের ২টি করে গরু মারা গেছে।
এ ছাড়া বখশিগঞ্জ মধুপুর, কালুপাড়া, লোহানীপাড়া, গোপালপুর ও গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে খুরারোগে গরুর মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে গত এক মাসে অন্তত ২০০ গরু মারা গেছে।
মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আলম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে এবারে খুরারোগে অন্তত ১০০ গরু মারা গেছে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষক ও খামারিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এর আগে গত জুন-জুলাইয়ে লাম্পি স্কিন রোগে ইউনিয়নে মারা গিয়েছিল দেড় শতাধিক গরু।’
আমরুলবাড়ি হাটখোলাপাড়া গ্রামের কৃষক ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে খুরারোগের ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি তাঁর একটি বিদেশি জাতের গরু খুরারোগে আক্রান্ত হয়ে খাওয়া ছেড়ে দেয়। তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আজমল হুদাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন। চিকিৎসা দেওয়ার পর ওই কর্মকর্তা এক হাজার টাকা ফি নেন। কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পরই গরুটি মারা যায়। তবে আজমল হুদা টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ওসমানপুর গ্রামের গরুর খামারি ওবায়দুল হক বলেন, খুরারোগে চার দিনে তাঁর খামারের উন্নত জাতের সাতটি গরু মারা গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১০ লাখ টাকা।
দামোদরপুর ইউনিয়নের আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার তিনটি গরুকে খুরা রোগের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে কয়েকবার ধরনা দিয়েছি। কিন্তু ভ্যাকসিন পাইনি। এখন গরুগুলো খুরারোগে আক্রান্ত হয়েছে। অনেক টাকা খরচ করেও সুস্থ হচ্ছে না।’ আমরুলবাড়ি গ্রামের মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় খুরারোগে গরু মারা যাচ্ছে। আমার চারটি গরু সুস্থ আছে, কিন্তু ভ্যাকসিন না পাওয়ায় ভালো গরুগুলো নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার গরু রয়েছে। প্রানিসম্পদ কার্যালয় থেকে গত মাসে খুরারোগের ১৫০ ভায়াল ভ্যাকসিনের চাহিদা পাঠানো হয়। তবে পাওয়া গেছে ৬০ ভায়াল। চলতি মাসে ১৫০ ভায়াল চাহিদা পাঠানো হলেও তা এখন পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আজমল হুদা বলেন, আগে খুরারোগের এক ভায়াল ভ্যাকসিনের দাম ছিল ১৫০ টাকা, এখন দাম হয়েছে ৪০০ টাকা। চাহিদামতো ভ্যাকসিন বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনের চাহিদা বেশি দিলে টাকা বেশি লাগে। ভ্যাকসিন নিয়ে আসার পরে যদি কেউ না নেন, তাহলে টাকা আমাদের পকেট থেকে দিতে হবে।’