ময়মনসিংহে চোরাই পথে আনা ভারতীয় চিনি নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে চোরাই পথে আনা চিনি নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেছে। চিনি নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ৩৭টি বস্তায় ১ হাজার ৮৫০ কেজি চিনি জব্দ করা হয়। আটক করা হয় এক ব্যক্তিকে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ভারতীয় অবৈধ চিনি নিয়ে মইলাকান্দা ইউনিয়নের নওপাই ও বেলতলী গ্রামের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে হাফেজ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রিয়াদ (১৯), অটোরিকশাচালক মো. রহমাতুল্লাহ (৩৫) ও পথচারী রুবেলের (২৭) অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেত্রকোনা হয়ে আসা ভারতীয় অবৈধ চিনি বিক্রি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় মইলাকান্দা ইউনিয়নের নওপাই গ্রামের মো. শামীম ও বেলতলী গ্রামের মো. ফয়সালের মধ্যে। এ ঘটনার জেরে গতকাল দুপুরে প্রথমে বেলতলী গ্রামের মো. রহিম নামের একজনকে ধরে নিয়ে যায় শামীমের পক্ষের লোকজন। পরে নওপাই গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে বিল্লাল মিয়াকে শ্যামগঞ্জ পশ্চিম বাজার থেকে ধরে নিয়ে যায় ফয়সালের পক্ষের লোকজন। বিকেলে উভয়কে ছেড়ে দিলেও চিনি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ফয়সালের পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শামীমের পক্ষের ওপর হামলা করেন। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১৩ জন আহত হন।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে গৌরীপুর থানা-পুলিশ, গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাকিল আহমেদ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার এক পর্যায়ে প্রশাসন জানতে পারেন, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কের শ্যামগঞ্জ বাজারে বাবুল সরকার নামের এক ব্যবসায়ীর গুদামে ভারত থেকে আসা অবৈধ চিনি রাখা হয়েছে। সন্ধ্যায় শ্যামগঞ্জ বাজারের ‘বাবুল ব্রাদার্স অ্যান্ড স্টোরে’ অভিযান চালায় প্রশাসন। গুদামে ভারতীয় চিনির বস্তা পাল্টে মাছের খাদ্যের বস্তায় লুকিয়ে রাখা ছিল। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৫০ কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়। এ সময় বাবুল সরকারের ভাই বিকাশ সরকারকে আটক করা হয়। গুদামটি নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার অংশে পড়ায় আটক ব্যক্তিকে চিনিসহ পূর্বধলা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ৩৭ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলায় আটক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গৌরীপুরের ইউএনও মো. শাকিল আহমেদ বলেন, ভারতীয় চিনি নিয়ে শামীম ও ফয়সাল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী যাওয়ার পর তিনি ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ভারত থেকে আনা চিনির সিন্ডিকেটের ভাগাভাগি নিয়ে দুই পক্ষের মারামারি হয়। পরে ওই দোকানে অভিযান চালিয়ে চিনিসহ একজনকে আটক করে পূর্বধলা থানায় হস্তান্তর করা হয়। কারণ, দোকানটি পূর্বধলায় পড়েছে।
গৌরীপুর থানার ওসি মাযহারুল আনোয়ার বলেন, মারামারির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।