‘সবার সামনে জুতাপেটা করায় সে লজ্জা পাইয়া মরছে’
ভাবির স্যান্ডেলে গেঁথে রাখা ছিল একটি আলপিন। তাঁর অভিযোগ, তাঁর দেবরই এই আলপিন স্যান্ডেলে গেঁথে রেখেছেন। এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ করেন গ্রাম্য মাতবরের কাছে। সব শুনে মাতবর ওই নারীর দেবরকে জুতাপেটা করার নির্দেশ দেন। জুতাপেটা করার পর ওই ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। গতকাল রোববার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই ব্যক্তির নাম ইলিয়াছ মৃধা (৪৫)।
গ্রামের লোকজন বলেন, কুতুবপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাদির মৃধার ছোট ছেলে ইলিয়াছ মৃধার সঙ্গে তাঁর সৌদিপ্রবাসী বড় ভাই আক্কাস মৃধার স্ত্রী তাছলিমার ঝগড়া লেগেই থাকত। রোববার সকালে তাছলিমার পায়ে একটি আলপিনের খোঁচা লাগে। তাছলিমার সন্দেহ, ওই আলপিন ইলিয়াছই তাঁর সেন্ডেলে গেঁথে রেখেছেন। তাছলিমা ও তাঁর স্বজনেরা বিষয়টি স্থানীয় গ্রাম্য মাতবর আলাউদ্দিন খানকে জানান। সব শুনে তিনি দ্রুত ওই বাড়িতে ছুটে আসেন এবং এ ঘটনার বিচারে সালিস বসান।
আলাউদ্দিন খান সেখানে কাদির মৃধাকে তাঁর ছেলে ইলিয়াছকে ১০০ জুতার বাড়ি দেওয়ার নির্দেশ দেন। কাদির মৃধা জনসমক্ষে ইলিয়াছকে জুতাপেটা করেন। এতে ইলিয়াছ ক্ষুব্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে গিয়ে বিষ কিনে এনে সবার সামনে তা পান করেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রথমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও সোমবার বিকেলে মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মর্গে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য আনা হলে বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে।
ইলিয়াছের স্ত্রী মিনু বেগম বলেন, ‘সবার সামনে জুতাপেটা করায় সে লজ্জা পাইয়া মরছে। এহন আমার দুই মাইয়া নিয়া আমি কই যামু? কী খামু? এই বিচার কার কাছে দিমু? আমার কথা শোনার মতো কেউ নাই।’
ইলিয়াছের ভাবি তাছলিমা বেগম বলেন, ‘ও আমার সেন্ডেলে পিন দিয়ে রাখলে আমি সকালে বিষয়টি শ্বশুর-শাশুড়িকে জানাই। তাঁরা আলাউদ্দিন খানকে জানান। আমার দেবর হয়ে সে যেহেতু আমাকে অনেক মেরেছে, তাই আমার শ্বশুরই তাকে কয়েকটি জুতা দিয়ে বাড়ি মারেন। এরপর সে বাজারে গিয়ে বিষ কিনে এনে খায়। এখানে আমার কী দোষ?’
গ্রাম্য মাতবর আলাউদ্দিন খান বলেন, তাঁকে খবর দিয়ে আনা হয়। এ সময় আরও অনেকে ছিলেন। তিনি ইলিয়াছের বাবাকে এর বিচার করতে বলেন। ইলিয়াছের বাবা তাঁকে কয়েকটি জুতাপেটা করেন। তিনি কাউকে জুতাপেটা করতে বলেননি।
এ বিষয়ে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. ইব্রাহীম বলেন, বিষপানে এক রোগী হাসপাতালে আসেন। তবে হাসপাতালে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শিবচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কাজী রিপন বলেন, এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। জুতাপেটার বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। যদি প্ররোচনামূলক কিছু থেকে থাকে, তাহলে তাঁদের কাছে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।