অর্থসংকটে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) কার্যালয়ের এখন নিয়মিত ব্যয় মেটানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃচ্ছ্রসাধনে ছাঁটাই করা হয়েছে দৈনিক মজুরিভিত্তিক ২০০ কর্মচারী। এমন পরিস্থিতির মধ্যে করপোরেশনের প্রশাসকের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ব্যয় করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৩৮ টাকা, যার বেশির ভাগ ব্যয় হয়েছে উপহারসামগ্রী দিতে। সংকটকালে এত বেশি ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন রাজশাহী সিটির মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। পরে মেয়র পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। পরে প্রশাসক নিযুক্ত হন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। সব মিলিয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন ৩ মাস ১৩ দিন, অর্থাৎ ১০৪ দিন।
১৯ আগস্ট প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। ১ ডিসেম্বর তাঁকে সাড়ম্বরে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয় নগর ভবনে।
সরকার পতনের খবরের পরই তাণ্ডব শুরু হয় রাজশাহী নগর ভবনে। ১০ তলাবিশিষ্ট ভবনের প্রতিটি বিভাগেই ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরদিন একটি কম্পিউটারও ছিল না কাজ করার মতো। সিটি করপোরেশনের হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা। ভঙ্গুর সিটি করপোরেশন এখনো ঠিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। মেয়রের দপ্তর এখনো সংস্কার করা হয়নি বলে সেখানে বসতে পারছেন না নতুন প্রশাসক খোন্দকার আজিম আহমেদ। ব্যয়ের বোঝা কমাতে সিটি করপোরেশন সম্প্রতি দৈনিক মজুরিভিত্তিক প্রায় ২০০ কর্মচারীকে ছাঁটাই করেছে। বিদ্যুতের বিল কমাতে রাতে বন্ধ রাখা হচ্ছে অর্ধেক সড়কবাতি। ঠিক এমন সময় প্রশাসকের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১৯ আগস্ট প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। তিনি দায়িত্ব পালন করেন ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সরকারি ছুটির দিনসহ সময় ছিল ৩ মাস ১৩ দিন বা ১০৪ দিন। বদলির আদেশ হলে ১ ডিসেম্বর তাঁকে সাড়ম্বরে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয় নগর ভবনে।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপহারসামগ্রী, নাশতা, ফুলের তোড়া, সাউন্ড সিস্টেম, ব্যানার ইত্যাদি বাবদ সর্বমোট ১ লাখ ২০ হাজার ৬৩৮ টাকা ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদায়ী অতিথির স্যুট, একটি শার্ট ও একটি টাইয়ের বিল দেওয়া হয়েছে ৪৬ হাজার ৬৭৩ টাকা এবং দুটি শাড়ির বিল দেওয়া হয়েছে ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। বাকি টাকা ব্যয় করা হয়েছে অনুষ্ঠানের অতিথিদের জন্য নাশতা, সাউন্ড সিস্টেম, ফুলের তোড়া ও ব্যানারের জন্য।
ব্যয়টা বোধ হয় কটু বেশিই হয়েছে। এখন সিটি করপোরেশনের রুটিন ব্যয় মেটানোই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আমি দেখব।এ বি এম শরীফ উদ্দিন, ইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান, রাজশাহী সিটি করপোরেশন
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এই ব্যয়ের বিষয়টি সাধারণত তিনি দেখেন না। তবে ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়াও একই দিনে বিদায় নিয়েছেন। ওই দিনই শেষ সভা ছিল। খাবারের ব্যয়টা বেশি হতে পারে। শুধু উপহারের জন্যই প্রায় লাখ টাকা ব্যয়ের বিষয়টি নজরে আনলে এ বি এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘কীভাবে হয়েছে, তা জানি না। ব্যয়টা বোধ হয় কটু বেশিই হয়েছে। এখন সিটি করপোরেশনের রুটিন ব্যয় মেটানোই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আমি দেখব।’