চুয়াডাঙ্গায় শীতের মধ্যে বৃষ্টি, মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ, প্রাথমিকে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা
চুয়াডাঙ্গা শহরের মল্লিকপাড়ায় অবস্থিত ওল্ড জে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৪০ জন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ক্লাস শুরুর নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পরও একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসেনি। প্রাক্–প্রাথমিকের ২০ জন শিক্ষার্থীর সবাই অনুপস্থিত। বিদ্যালয়ের মোট ১৮০ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল মাত্র ১০ জন।
জেলার চারটি উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ শিক্ষার্থীদের এমন উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বলছেন, কয়েক দিন ধরে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আজ সকালে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখার কোনো ঘোষণা না এলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধের প্রভাব পড়েছে সেখানে। এতে প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে।
চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৯২ শতাংশ। এদিন ভোর ৫টা ৪৫ থেকে সকাল ৮টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে। কর্মকর্তারা জানান, শীত মৌসুমে আজ প্রথম বৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, শীত ও বৃষ্টির কারণে বিদ্যালয়গুলোয় উপস্থিতির হার কমে গেছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখান থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা না পাওয়ায় ছুটি দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া আজ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি এদিন বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয় ৯৭ শতাংশ। এর আগে ১২ জানুয়ারি ৯ দশমিক ৬ শতাংশ, ১৩ জানুয়ারি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৪ জানুয়ারি ৯ দশমিক ৮ শতাংশ রেকর্ড করা হয়। অর্থাৎ ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারি একটানা তিন দিন জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তা ছাড়া সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়া, ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণ না পড়ায় ভূপৃষ্ট উত্তপ্ত না হওয়া এবং উত্তরের কনকনে ঠান্ডা বাতাসে চরম শীত অনুভূত হয়ে থাকে। আজ সকালে তাপমাত্রা আগের দিনের তুলনায় ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলেও ভোর থেকে একটানা ২ ঘণ্টা ২৫ মিনিট বৃষ্টির কারণে চরম শীত অনুভূত হচ্ছে।
এক পালায় পরিচালিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ক্লাস শুরু হয়। আজ সকাল ১০টায় সরেজমিন ওল্ড জে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ১৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১০ জনকে উপস্থিত পাওয়া যায়। এদিন প্রাক্–প্রাথমিকের ২০ জন ও দ্বিতীয় শ্রেণির ৪০ জন শিক্ষার্থীর একজনও বিদ্যালয়ে আসেনি। প্রথম শ্রেণিতে ২৫ জনের মধ্যে ১ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৫ জনের মধ্যে ১ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩০ জনের মধ্যে ৫ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৩০ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জনকে উপস্থিত পাওয়া যায়।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী শ্যাকড়াতলা মোড় এলাকার শারমিন বলে, ‘শীতির ঠেলায় বাড়ি থেকে বের হতি মন চাইচছেলো না। পড়াশুনায় গ্যাপ হয়ে যাবে, তাই আইচি।’ একই শ্রেণির ছাত্রী বাগানপাড়ার মনিকা খাতুনের ভাষ্য, ‘স্কুলি না আসলি অনেক কিচু শিকতি পাইরব না। তাই, শীতিরি দিনিও কষ্ট কইরে আইচি।’
বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসিম ফাতেমা জোয়ার্দ্দার বলেন, কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহ ও তীব্র শীতের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি নিয়ে খবর প্রচারিত হওয়ায় অভিভাবকেরা সন্তানদের পাঠাননি।
নিকট অতীতে কখনোই শিক্ষার্থীদের এমন অনুপস্থিতির ঘটনা ঘটেনি বলে জানালেন সদর উপজেলার বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা সুলতানা। তিনি বলেন, একই বাড়িতে কেউ হাইস্কুল (মাধ্যমিক), কেউবা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করে। যেহেতু হাইস্কুলগুলোয় আজ শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অভিভাবকেরা তাই ধরে নিয়েছেন প্রাইমারিতেও ছুটি। তাই সন্তানদের পাঠাননি।
দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বরূপ কুমার দাস জানান, দুই পালায় পরিচালিত বিদ্যালয়টিতে প্রথম পালায় প্রাক্-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মোট ৭৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩২ জন উপস্থিত হয়েছে। শীত ও বৃষ্টির কারণে এই অনুপস্থিতি।