ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপে দূর হবে মানুষের ভোগান্তি

‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ’ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের নবীগঞ্জেছবি: প্রথম আলো

ভূমির জরিপ ও সীমানা নিয়ে জটিলতায় আমাদের দেশে আহরহ সংঘর্ষ-মারামারি ও মামলা হচ্ছে। ভূমি জরিপের অস্বচ্ছতার কারণে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হতো, যা এখনো চলছে। চিরতরে এই ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করা হচ্ছে।

ডিজিটাল জরিপে একেবারে খুঁটিনাটি, মিলিমিটার পর্যন্ত মাপজোখ করা হবে। এই জরিপে ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ সব কিছু আসবে। এটা ডিজিটালিভাবে সংরক্ষণ করা হবে। আগামী ৫০ বছর এটা সংরক্ষণ থাকবে, প্রয়োজনে তা আরও বেশি সময় রাখা যাবে। তখন জরিপের বিষয়টি আরও সহজ হয়ে যাবে। জরিপ নিয়ে সমাজের যে অস্থিরতা, যে অস্বচ্ছতা, সেটা আর থাকবে না।

শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবীগঞ্জ এলাকায় খেলার মাঠে ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ’ কার্যক্রমে পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্প ও জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উপিস্থত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তপরের মহাপরিচালক মহ. মনিরুজ্জামান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্প পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, জেলা সিভিল সার্জন মশিউর রহমান প্রমুখ।

উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ আরও বলেন, ‘ডিজিটাল ভূমি জরিপ হলে ভূমির মালিকেরা অনলাইনে ঘরে বসে জমির পরচা, খতিয়ান পাবেন। ঠিক একইভাবে খাজনাও ঠিক ততটুকুই দিতে হবে। এর বেশি দেওয়া লাগবে না। কোনো অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি থাকবে না। এখন যে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, আমরা অভিযোগ পাচ্ছি, ১০০ টাকার খাজনা দিতে গেলে তাঁর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা রাখা হচ্ছে। সেটা আর থাকবে না। ডিজিটাল জরিপের ফলে মামলার সংখ্যা কমে যাবে, ফৌজদারি মামলার সংখ্যাও হ্রাস পাবে। সমাজে ও গ্রামে জমি নিয়ে যে অস্থিরতা, তা চিরতরে দূর হবে। জমিসংক্রান্ত ফৌজদারি মামলাও কমে যাবে।’

ভূমি অফিসগুলোতে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উল্লেখ করে ভূমি উপদেষ্টা হাসান আরিফ আরও বলেন, এই সমস্যা দূর করতে সরকার কল সেন্টার সেবাও চালুর করতে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি অভিযোগ দিলে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ‘জনবান্ধব ভূমিসেবা প্রদানে মাঠ প্রশাসনের ভূমিকা ও ভূমি সেবা অটোমেশনে ডেটা এন্ট্রির গুরুত্ব’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের চেকের টাকা কোনো হয়রানি ছাড়াই পাওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের উদ্যোগটি সারা দেশে মডিউল হিসেবে তৈরি করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান তিনি। এতে সারা দেশের মানুষ উপকৃত হতে পারেন।

উল্লেখ্য, ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এ বছরের জুলাই থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮৩ কোটি টাকা। এ সার্ভে শেষ হবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে।