কিশোরগঞ্জে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, তাঁর ভাগনে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হোসেনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে।   আজ রোববার দুপুরে ভুক্তভোগী এক তরুণী কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর আমলি আদালতে ওই মামলা করেন।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, ভয় দেখিয়ে আট লাখ টাকা আদায়সহ নানাভাবে ওই তরুণীকে হয়রানি করার অভিযোগে করা হয়।

মামলার করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমান মামলা আমলে নিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানাকে রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অপর আসামি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের বড় ভাই মোশারফ হোসেন। মোশারফ হোসেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুবলীগ নেতা। তাঁদের ভাগনে নাজমুল হোসেন এই মামলার ১ নম্বর আসামি।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভুক্তভোগী ওই তরুণী একটি কলেজের শিক্ষার্থী। বাড়ি হাওর এলাকায় হওয়ায় কলেজের কাছে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। কলেজে যাওয়া-আসার পথে সভাপতির ভাগনে নাজমুল হোসেন পথ রোধ করে প্রায় সময় প্রেম নিবেদন করতেন। একপর্যায়ে রাজি না হওয়ায় নাজমুল তাঁর মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের ভয় দেখিয়ে কলেজে যাওয়া-আসার পথ বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দেন। এরপর নাজমুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই তরুণীর। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন নাজমুল। নাজমুল তাঁর মুঠোফোনে এসবের স্থির চিত্র ও ভিডিও ধারণ করেন।

একপর্যায়ে ওই তরুণী বিষয়টি ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ও তাঁর বড় ভাই মোশারফ হোসেনকে মুঠোফোনে জানান। কিন্তু তাঁরা ওই তরুণীকে কিশোরগঞ্জ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। তবে নাজমুল হোসেন মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন।

মামলার আরজি সূত্রে আরও জানা গেছে, পরে ভুক্তভোগী ওই তরুণী চাপ সৃষ্টি করলে এক কাজির মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৮ জুন নাজমুলের বিয়ের নিবন্ধন করা হয়। কিন্তু বিয়ে নিবন্ধনের কোনো অনুলিপি তাঁকে দেওয়া হয়নি। এদিকে তরুণী জানতে পারেন নাজমুল হোসেন আগেও বিয়ে করেছেন এবং তাঁর দুটি সন্তান আছে। বিষয়টি জানার পর ওই তরুণী নাজমুলকে মৌখিকভাবে তালাক দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুল তাঁর মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে দুইবার ওই তরুণীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। আর এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ও তাঁর বড় ভাই মোশারফ হোসেনও ওই তরুণীকে ভয়ভীতি দেখান।

পরে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ওই তরুণীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে দুটি দামি মুঠোফোন কেনেন। মোশারফ হোসেনও একই কৌশলে ওই তরুণীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সর্বশেষ গত ১৯ এপ্রিল নাজমুল আবারও শারীরিক সম্পর্ক করে ভিডিও ধারণ করেন। এসব ঘটনায় তাঁদের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় ধারণকৃত সব ভিডিও, স্থির চিত্র ও অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

একটি মিথ্যা অভিযোগ এনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ভাগনের ঘটনার সঙ্গে আমাদের জড়ানো হয়েছে। আমি যত দূর জানি ভাগনে নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে হয়েছে। বিয়ের সব ডকুমেন্টও রয়েছে।
আনোয়ার হোসেন মোল্লা, সভাপতি, কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ

ওই তরুণীকে হুমকি ও তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার বা আমার বড় ভাইয়ের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একটি মিথ্যা অভিযোগ এনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ভাগনের ঘটনার সঙ্গে আমাদের জড়ানো হয়েছে। আমি যত দূর জানি ভাগনে নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে হয়েছে। বিয়ের সব ডকুমেন্টও রয়েছে।’ তবে ভাগনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।

ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার স্ত্রীর (ওই তরুণী) মুঠোফোনে ধারণকৃত আমাদের দুজনের সম্মতিতে করা একটি পর্নো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে পরে দুজনে মিলে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলাও করি। এ ঘটনার পরে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। বিবাহের সকল ডকুমেন্টসও রয়েছে। তবে সপ্তাহখানেক আগে মুঠোফোন একটি খুদে বার্তা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আমার কিছুটা মনোমালিন্য হয়। এ কারণেই হয়তো অন্যের প্ররোচনায় সে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। তবে আমার এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই হয়তো আমার দুই মামাকেও জড়ানো হয়েছে।’

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার কাগজ এখনো হাতে পাইনি। পেলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’