শিবচরে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহতের পর প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ

মাদারীপুরের শিবচরে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহতের পরে প্রতিপক্ষের অন্তত ৫টি বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সোমবার সন্ধ্যায় দত্তপাড়া ইউনিয়নের খাড়াকান্দি গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরের শিবচরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় প্রতিপক্ষের অন্তত পাঁচটি বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় দত্তপাড়া ইউনিয়নের খাড়াকান্দি গ্রামে এ হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এর আগে দুপুরে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হিরু মাতুব্বর (৩৫) নামের বিএনপির এক কর্মী নিহত হন। হিরু একই ইউনিয়নের আর্য্যদত্তপাড়া এলাকার এসকেন্দার মাতুব্বরের ছেলে। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। সংঘর্ষে আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দত্তপাড়া ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন বিএনপির নেতা মালেক মোল্লার সঙ্গে টুকু ফরাজির বিরোধ চলে আসছিল। গতকাল রোববার রাতেও এই দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরই জেরে উভয় পক্ষের লোকজন আজ দুপুর ১২টার দিকে দেশি অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়ে আবার সংঘর্ষে জড়ান। এতে আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ছয়জন। এ সময় মালেক মোল্লার অনুসারী হিরু আর্য্যদত্তপাড়া এলাকায় গেলে তাঁকে একা পেয়ে কুপিয়ে জখম করেন টুকু ফরাজি ও জিয়াউল মাতুব্বরের লোকজন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় হিরুকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হিরুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পালিয়ে যান প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সুযোগে মালেক মোল্লার লোকজন প্রতিপক্ষ সাঈদ খাঁ, আক্কাস মাতুব্বর, ফাজর মাতুব্বর ও চানু মিয়ার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন তাঁদের বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে শিবচর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আবার সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত আক্কাস মাতুব্বর বলেন, ‘আমরা টুকু ফরাজির সমর্থক হওয়ায় মোল্লার লোকজন আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। পরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আমাদের গৃহহীন করেছে। অথচ আমরা কোনো মারামারি মধ্যে ছিলাম না। তবুও হামলার শিকার হতে হলো।’

মাদারীপুরের শিবচরে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত হিরু মাতুব্বরের বাড়িতে ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা। সোমবার দুপুরে উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের আর্য্যদত্তপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

উজ্জ্বল হোসেন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে বিএনপির ‍দুই পক্ষ মারামারি হলে একজনের মৃত্যু হয়। বিকেলে নিহত ব্যক্তির পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করেন। তাঁরা ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যান। বাড়ির আশপাশে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশকে বারবার জানানো হলেও পুলিশ এলাকায় এসে কোনো ভূমিকা রাখেনি। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শিবচর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা রতন কুমার ঘোষ বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি। কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে স্থানীয় ও আমাদের টিমের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।’

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোকতার হোসেন বলেন, নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ধ্যার আগে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তখন একটি পক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালায়। পরে দ্রুত পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই এলাকায় আবার সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। দোষীদের ধরতে অভিযান চলছে।