কুড়িগ্রামে ভারী বৃষ্টি, শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা
কুড়িগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় শহর ও গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ড্রেনেজব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় জেলা শহরের সরকারি বিভিন্ন অফিস, আদালত ও আবাসিক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজারো মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিতে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে কাজ না থাকায় বেশি কষ্ট হচ্ছে শ্রমজীবীদের।
রাজারহাট কৃষি ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম জেলায় ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কোনো এলাকায় যদি ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় সেটিকে হালকা বৃষ্টি বলা হয়। ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার হলে তা মাঝারি বৃষ্টি এবং ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বলা হয়। আর ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটারের বৃষ্টিকে ভারী বৃষ্টি হিসাবে ধরা হয়। আর বৃষ্টি ৮৮ মিলিমিটারের বেশি হলে তা অতি ভারী বৃষ্টি হিসেবে ধরা হয়।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের জজকোর্ট মোড় এলাকা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুড়িগ্রাম পৌর বাজার, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতালপাড়া, হাটিরপাড় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জমে থাকা হাঁটুপানির মধ্য দিয়ে চলাচল করছে মানুষ। এ ছাড়া রাস্তায় পানি জমে থাকায় অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। অন্যদিকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম ভোকেশনাল মোড় এলাকার আশরাফুজ্জামান সুজন নামের একজন ব্যক্তি তাঁর ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘গতকাল রাতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে কুড়িগ্রাম শহরে। জজকোর্ট মোড় থেকে ডিসি অফিস, কেউ ভুড়া (কলাগাছের ভেলা) চালাতে চাইলে কলার গাছ নিয়ে আসুন। পানি আর পানি।’
জান্নাতুল তহুরা তন্নি নামের এক কলেজশিক্ষার্থী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সেখানে লিখেছেন, ‘কেমন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বছরের পর বছর এভাবে পানি পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছাড়াই থাকতে পারে?’
কুড়িগ্রাম যতিনেরহাট এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশাচালক মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সারা দিন একবারেও দম নিচ্ছে না। রাত পার হলেই ৫০০ টাকা কিস্তি দিতে হবে। বাধ্য হয়া অটোরিকশা নিয়ে বের হইছি। কিন্তু বৃষ্টিতে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল থেকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম, কোনো মানুষের দেখা নেই।’
কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, বৃষ্টিতে স্টেশনের ভেতরে হাঁটুপানি। রান্নার চুলা ডুবে গেছে। ঠিকমতো দাপ্তরিক কাজ করা যাচ্ছে না। শহরের পানিনিষ্কাশন–ব্যবস্থা ভালো নয়। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই দুর্ভোগে পড়তে হয়।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই বৃষ্টি কমবে না। ৯ অক্টোবর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে জেলার সবগুলো নদ–নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নিমাঞ্চল প্লাবিত হলেও বন্যার আশঙ্কা নেই।