লুটপাট, সাম্প্রদায়িক হামলা রুখে দেওয়ার আহ্বান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের

সাম্প্রদায়িক হামলা ও লুটপাট রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনেছবি: প্রথম আলো

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সারা দেশে যে সহিংসতা, লুটপাট ও সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এ হামলা রুখে দিতে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেছেন তাঁরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আয়োজনে এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী, চলচ্চিত্রকর্মী, পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরাও অংশ নেন। দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা করেন শিক্ষকেরা। এটি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন একই বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্ত্তী প্রমুখ।

অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, ভয়ংকর একটা ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়েছে। তারা অভিনব কায়দায় এগিয়ে গেছে। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনের পর তা বেহাত হয়েছে। ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা প্রতিবার বেহাত হয়েছে। ’৯০ সালের এরশাদবিরোধী আন্দোলন বেহাত হয়েছে। কিন্তু এবার সব শ্রেণির মানুষ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ছাত্র-জনতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীদের হিস্যা দিতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে। ফ্যাসিজমের পতন ঘটলে তার ধ্বংস ও শব্দ অনেক প্রবল হয়। আওয়ামী ফ্যাসিজম সবাইকে অসম্মান করেছে, তারাও অপমানিত হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়া কিন্তু কঠিন। এটা এড়ানোর উপায় নেই। কিন্তু নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। গতকাল সোমবার রাতেও ছাত্র-জনতা সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধ করেছে।

আরও পড়ুন

ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্ত্তী বলেন, এই সময়ে যে সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে, তার প্রতিরোধও করছেন ছাত্র-জনতা। তাঁরা পাড়ায় পাড়ায় পাহাড়া দিচ্ছেন। পরবর্তী প্রজন্ম রুখে দাঁড়াচ্ছে। এটাই হোক বাংলাদেশের ছবি। এই প্রতিবাদ জারি থাকুক সবখানে। ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনৈতিক কারণে শিক্ষকেরা শক্তিশালী শিক্ষক হয়ে উঠছেন না। এই সময়ে সরব হওয়া উচিত। শিক্ষাঙ্গনে দলীয় লেজুড়বৃত্তির বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে। এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারলে শিক্ষাঙ্গন একাডেমিক ও সাংস্কৃতিকভাবে উচ্চতর জায়গায় নেওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন

ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আলী বলেন, এই বিপ্লবের মূল নেতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা। এই তরুণেরা জানত কেন্দ্রীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সংস্কার না করলে কোনো কিছুই ঠিক হবে না। এই অভ্যুত্থান একটা সংস্কারের আন্দোলনও। এখনই ঠিক করতে হবে, এই তরুণদের স্বপ্ন তারা ভুলুণ্ঠিত করবে, নাকি তাদের দেখানো পথে এ দেশকে এগিয়ে নিতে চায়। এই বিপ্লব ছাত্র-জনতার বিপ্লব। এই বিপ্লবের সফলতার পথে অনেক জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। আইনের শাসন কায়েম করতে হবে।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘ছাত্ররা জনতাকে নিয়ে যে আলোর পথ, মুক্তির পথ দেখিয়েছে, সেখানে শামিল হতে পেরে ভালো লাগছে। এ দেশে তারা নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। পাশাপাশি এই উচ্ছ্বাসের ফাঁকে একটি শ্রেণি লুটপাট ও সাম্প্রদায়িক হামলা চালাচ্ছে। এগুলো দেখে মন খারাপ হয়ে গেছে। এই আন্দোলন কোনো ধ্বংসচক্রের জন্য নয়, কোনো হানাহানি বা লুটতরাজের জন্য নয়। সবাইকে নিয়ে এক অসম্প্রায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য।’