গ্রামের ফার্মেসিতে অপচিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু, ভুয়া চিকিৎসকের ২ বছরের জেল
মেহেরপুরের গাংনীতে ওষুধের দোকানির অপচিকিৎসায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের হালিমা ফার্মেসিতে চিকিৎসা নিয়ে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্বজনদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ওই দোকানিকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি ওই ফার্মেসি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দণ্ড পাওয়া দোকানির নাম সুজন মিয়া (২৪)। তিনি উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। তাঁর বড় ভাই শরিফুল ইসলাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা। এসএসসি পাসের পর ভাইয়ের মালিকানাধীন ফার্মেসিতে বসতেন সুজন। ভাইয়ের অবর্তমানে ওই নবজাতককে চিকিৎসা দেন। এতে নবজাতকটি মারা যায় বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেন।
স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, নবজাতকের মৃত্যুর পর গতকাল সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন শিশুটির বাবা মনিরুল ইসলাম ও মা নাজমা খাতুন। বিকেলে মোহাম্মদপুর গ্রামের ওই ফার্মেসিতে অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম। অভিযানে অভিযুক্ত সুজনের কাছে চিকিৎসা দেওয়ার কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে আখ্যায়িত করে দুই বছরের কারাদণ্ড ও নগদ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া অনুমোদন ছাড়া ফার্মেসি চালানোয় ফার্মেসিটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
শিশুটির বাবা মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার সকালে গাংনীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাঁর স্ত্রী এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। পরদিন শিশুকে নিয়ে তাঁর গ্রামে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে শিশুটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে হালিমা ফার্মেসির স্বাস্থ্যকর্মী শরিফুল ইসলামের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু শরিফুল না থাকায় তাঁর ভাই সুজন শিশুটির চিকিৎসা দেন এবং চার ধরনের ওষুধ দেন। ওই ওষুধ খেয়ে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থা আরও খারাপ হলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কুষ্টিয়ায় নেওয়ার পথে শিশুটি মারা যায়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম নিজ গ্রামে একটি ফার্মেসি খুলে চিকিৎসা দিতেন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি শিশুবিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। শরিফুলের অনুপস্থিতিতে তাঁর ছোট ভাই সুজন সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা দেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। বৃহস্পতিবার সকালে এক নবজাতককে অপচিকিৎসা দিলে শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় ওই ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে ভুয়া চিকিৎসক সুজনকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়।
অভিযানের পর ফার্মেসির মালিক ও দণ্ডপ্রাপ্ত সুজনের ভাই শরিফুল ইসলাম গা ঢাকা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে দণ্ড পাওয়া সুজনকে কারাগারে পাঠানোয় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, সুজন মিয়াকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে বলেছে পুলিশ। পরিবার মামলা করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।