চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের দলে ভেড়ানোর অভিযোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপিতে বিরোধ দেখা দিয়েছে। একটি পক্ষ জেলা আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া ও সদস্যসচিব রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড, আওয়ামী লীগ ও বিতর্কিত লোকজনকে দলে ভেড়ানো এবং কমিটি–বাণিজ্যের অভিযোগ করেছে। এদিকে ওই দুই নেতা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন।

জেলা কমিটির এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আইনজীবী রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম ওরফে বুলবুল, সদর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ওবায়েদ পাঠান অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের সম্মেলন হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা (আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সাবেক শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক) আশরাফ আলী ওরফে আশরাফ মাস্টারকে সভাপতি ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হত্যা মামলার পলাতক আসামি চরবাগডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা টিপুর ঘনিষ্ঠ সহচর হত্যা মামলার আসামি আজিজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। আজিজুল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মাসুদ রানার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এ কমিটি করার উদ্যোগ নেন গোলাম জাকারিয়া ও রফিকুল ইসলাম। তবে দলে সমালোচনা ও অভিযোগ উঠলে লিখিতভাবে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, কমিটি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে আহ্বায়ক, সদস্যসচিব ও এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক—এ তিনজনের যৌথ স্বাক্ষরের নির্দেশ দিয়েছে দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ নির্দেশ মানছেন না গোলাম জাকারিয়া ও রফিকুল ইসলাম। তাঁরা এক নম্বর যুগ্ম মহাসচিব আইনজীবী রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর ছাড়াই বিভিন্ন কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে গোলাম জাকারিয়া বলেন, কমিটি অনুমোদনের ব্যাপারে তিনজনের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক নয়। আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের স্বাক্ষরই যথেষ্ট। এতে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের কোনো ব্যাপার নেই।

জেলা পুলিশ জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তালিকাভুক্ত ও হত্যা মামলার পলাতক আসামি এবং আজিজুলও হত্যা মামলর আসামি।

আশরাফ আলী আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম।

তবে মাসুদ রানার কাছে টাকা নিয়ে কমিটি করার কথা অস্বীকার করে গোলাম জাকারিয়া বলেন, ‘আমরা কমিটি করতে গিয়েছিলাম ঠিকই, অভিযোগ ওঠায় কমিটি করিনি। লিখিত কোনো কমিটিও ঘোষণা দিইনি। যাচাই-বাছাই করে কমিটি দেব। তবে আশরাফুল আলম বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, প্রয়াত সুলতানুল ইসলাম মনি উকিল ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনর রশিদের আমলে বিএনপি করা লোক। মাঝখানে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ভোটের রাজনীতিতে তাঁর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’

এ ব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য হারুনর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশরাফুল আলম আমার সময়ে বিএনপি করেননি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আজিজুল হত্যা মামলার আসামি। ওই সম্মেলনে হত্যা ও মাদক মামলার অনেক আসামি ছিলেন। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

এ ছাড়া গোমস্তাপুর উপজেলার আহ্বায়ক করার জন্য মোতালেব নামের একজনের কাছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছেন গোলাম জাকারিয়া, এমন অভিযোগও আছে। এ বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম। এ ব্যাপারে সদস্যসচিব রফিকুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোতালেবের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছি, ঘটনা সত্য।’

আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, গোলাম জাকারিয়া এ অভিযোগ সম্পর্কে স্বীকারোক্তিও দিয়ে বলেছিলেন, দল চালাতে খরচের জন্য এ টাকা নিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে গোলাম জাকারিয়া বলেন, এ অভিযোগ বহু পুরোনো। বোগাস অভিযোগ।
ওবায়েদ পাঠান অভিযোগ করেন, ‘গোলাম জাকারিয়া আমাকে আহ্বায়ক রাখতে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। আমি এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেছি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে।’

এ প্রসঙ্গে গোলাম জাকারিয়া বলেন, ওবায়েদ পাঠানকে আহ্বায়ক করে গঠন করা ৩১ সদস্যের কমিটির সদস্যসচিব হাসান শরিফ মোল্লাসহ ২৪ জন আহ্বায়ক ওবায়েদ পাঠানের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে পদত্যাগ করেন। এ ছাড়া তিনি অযোগ্য।