মনু নদে পানি বাড়লেই ঘর ছাড়তে হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের

মনু নদে পানি বেড়ে যাওয়ায় মাইজপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। আজ বুধবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নেছবি: প্রথম আলো

মনু নদে পানি বাড়লেই ঘর ছাড়তে হচ্ছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মাইজপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের। চলতি বর্ষায় তাঁদের তিনবার ঘর ছাড়তে হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মনু নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকের ঘরেই হাঁটুসমান পানি প্রবেশ করেছে। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৮৭টি পরিবারের বসবাস।

আজ বুধবার সকালে মাইজপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, মনু নদের পাড় ঘেঁষে গড়ে তোলা এই প্রকল্পের প্রায় সব ঘরেই কমবেশি পানি উঠেছে। সকালবেলা ঘরছাড়া অনেকে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর বসে আছেন। পানিতে ডুবে থাকা ঘরের দিকেই সবার চোখ। একজনকে দেখা গেল, পানি ভেঙে ঘর থেকে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসছেন। এ রকম অনেকেই যা পেরেছেন, ঘর থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন। অনেকে ঘর ছাড়তে চাননি। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন ঘরে থাকার।

সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আশ্রয়ণ প্রকল্প-সংলগ্ন মনু নদের মৌলভীবাজার শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর বসে ছিলেন লীলাময় মালাকার। তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে থাকেন। প্রকল্পের পশ্চিম দিকটায় তাঁর ঘর। সেদিকটা নিচু হওয়ায় প্রথমেই তাঁর ঘরে পনি প্রবেশ করে।

লীলাময় মালাকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ নিয়ে আমি দুইবার ঘর ছাড়ছি। ঘরে বুকপানি। আমরা ছয়জন আছি পরিবারে। লেপ-তোশক নষ্ট অইছে। হোটেল থাকি আনিয়া খাইলাম। আত্মীয়স্বজনেও দেরা।’ জরিনা বেগম নামের এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবাসন দিছইন। আমরারে যদি একটা দোতলা বানাইয়া দিতা। ঘুমানির দরকার নাই, বইয়া কাটাইতাম পারতাম। চাইর ইট দিয়া চৌকি উঁচা করছি। যে পানি বাড়ছে, চাইর ইটে কিতা অইত। কেঁথা-বালিশ ভিজা।’

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এই বন্যায় তো কিছু করা যাবে না। শুষ্ক মৌসুমে সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিভিন্ন স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার দুপুর ১২টার তথ্য অনুযায়ী, মনু নদ রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ও চাঁদনীঘাটে ৫০ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারা নদী শেরপুরে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, পানি নামছে। উজানে নতুন করে পানি ঢুকছে না। তবে চাঁদনীঘাটে একটু বাড়বে, যেহেতু এদিক দিয়ে পানি যাবে।