জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্যাগী ও নির্যাতিতদের মূল্যায়নের দাবিতে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে ত্যাগী ও নির্যাতিতদের মূল্যায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল। আজ শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকেছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে ত্যাগী ও নির্যাতিতদের মূল্যায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শাখা ছাত্রদলের শতাধিক নেতা-কর্মী। আজ শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে মিছিলটি বের করা হয়। শহীদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে কর্মসূচিটি শেষ করার পর একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতা-কর্মীর সূত্রে জানা গেছে, জাকসু নির্বাচন ঘিরে সম্প্রতি সেখানে সংগঠনটির কমিটি ঘোষণার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়াকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন।

তবে নেতা-কর্মীদের দাবি, এ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা নাকি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসা ত্যাগী ও নির্যাতিতরা স্থান পাবে—এ নিয়ে চলছে আলোচনা। এরই মধ্যে আজ বিকেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে।

বিক্ষোভ–পরবর্তী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কর্মী মাজহারুল তমাল। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানজিলা হাসান (বৈখাশী) বলেন, ‘৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। তাঁরা প্রচার করছে যে আমরা জাকসু চাই না। কিন্তু আমরা অবশ্যই জাকসু চাই; তবে সেটা যৌক্তিক সংস্কারের পর। জাকসুতে যাঁরা নির্বাচন করবেন, তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সেবক হবেন না। সে ক্ষেত্রে ছাত্রদলের কমিটিতে যাঁরা থাকবেন, তাঁরাই যে জাকসু নির্বাচন করবেন, বিষয়টি এমন নয়। যদি ছাত্রদলের কোনো কমিটিই না থাকে, তাহলে তারা কীভাবে প্রার্থী নির্ধারণ করবে? তাই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের উচিত রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান, অভিজ্ঞ, এবং ত্যাগী নেতৃত্বের ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠন করা। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন না করলে ভবিষ্যতে ছাত্রদল কিংবা ছাত্ররাজনীতিতে পরবর্তী প্রজন্ম উৎসাহিত হবে না বলে আমরা মনে করি।’

বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্রদলের ডাকা মতবিনিময় সভাকে প্রত্যাখ্যান করে ইতিহাস বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী রায়হান হোসাইন বলেন, ‘যাঁরা ১৬ থেকে ১৭ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রাণটা ধরে রেখেছেন, তাঁদের বাদ দিয়ে আজ যে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে—সেটিকে আমরা অবশ্যই অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করছি। যাঁরা জাকসুকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের জুনিয়র কমিটি চাচ্ছেন, তাঁদের বলতে চাই, জাকসু এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল দুটি স্বতন্ত্র সংগঠন। সে ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এবং জাকসুকে এক করা যাবে না। জাবি ছাত্রদলের কমিটি হতে হবে ত্যাগী এবং নির্যাতিতদের নিয়ে।’

ছাত্রদলের আরেক কর্মী ও ইতিহাস বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জরজীস ইব্রাহিম বলেন, ‘শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে। জাকসুর অসিলায় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ-ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়নের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরা নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। আমাদের সর্বশেষ হল কমিটি হয়েছিল ২০১২ সালের জুন মাসে। এরপর ২০১৬ সালে আংশিক কমিটি হলেও আমরা অনেক পদ-প্রত্যাশীরা পরিচয়ই খুঁজে পাইনি। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি মতবিনিময় সভা করেছি। তবে আজ সিনিয়রদের বাদ দিয়ে ৪৭তম ব্যাচ থেকে ৫৩তম পর্যন্ত যে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে—তা আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম। আমরা শুধু আমাদের একটা পরিচয় চাই, ১৬ বছরের কাজের মূল্যায়ন চাই। আমরা কমিটিতে আসলে হলে থাকব না, হলে থাকতেও চাইও না।’